নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বুধবার। সকাল ৮:৫৯। ১৪ মে, ২০২৫।

মুদ্রানীতি আরও উসকে দেবে মূল্যস্ফীতি

জুলাই ২, ২০২২ ৯:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

র্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে খুব বেশি সহায়তা করবে না। বরং আরও উসকে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, এতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে।

অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। এতে মানুষের আয় বাড়বে না। উলটো টাকার ক্ষয়জনিত কারণে মানুষ চাপে পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে স্থানীয় বাজারে আরও বাড়তে পারে।

ঘোষিত মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এমন আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে মুদ্রানীতির বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাস্তবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উলটো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঘোষিত মুদ্রানীতি গতানুগতিক। এখানে নতুন কিছু নেই। দায়সারা ভাবে একটা মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে তাই করেছে। করোনার ক্ষতি মোকাবিলা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়াটা ছিল জরুরি। কিভাবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নেই। কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেই বরং বিভিন্ন সূচকের যে সব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাতে ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আরও পড়ুনঃ  বাগমারায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

তিনি আরও বলেন, নিয়মিত সুদের হার না বাড়িয়ে বাড়ানো হয়েছে নীতিনির্ধারণী বা রেপো সুদের হার। এতে ব্যাংকগুলো আরও বিপদে পড়বে। অর্থনীতিতে নানা সংকটের মধ্যে যখন ঋণ প্রবাহ আরও বাড়ানোর দরকার ছিল তখনও কমানো হলো। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারে না। এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে আমদানি ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত। মূল্যস্ফীতি কমাতে পণ্য মূল্যের লাগাম টানতে হবে। সে ব্যাপারে মুদ্রানীতি ও বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বরং আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আমদানি বিকল্প পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে নতুন পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালুর ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর। এতে অর্থের সরবরাহ আরও বাড়বে। সরকারের ঋণও বাড়বে। পাশাপাশি বিলাস জাতীয় দ্রব্য, বিদেশি ফল, অশস্য খাদ্যপণ্য, টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্র্যন্ত মার্জিন আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উল্লিখিত সব পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার হিসাবে পরিচিত রেপোর সুদের হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই নীতি সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে ব্যাংকগুলোকে এখন বেশি সুদ দিতে হবে। যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আংশিক কাজ দেবে। তবে এর প্রভাবে ঋণের প্রবাহ বেশি কমে গেলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়ে পণ্যের সরবরাহজনিত সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর দিকে তাকালে মনে হচ্ছে তারা মুদ্রানীতির পরিবর্তে শিল্পনীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেওয়ার কথা মুদ্রানীতি। দিয়েছে শিল্পনীতি। শিল্পনীতি দেবে সরকার বা সরকারের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুনঃ  বাগমারায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে শশুর বাড়িতে জামাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু

তিনি আরও বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার কে ঠিক করছে-তা আজও স্পষ্ট নয়। এখানে স্বচ্ছতা দরকার। যেভাবে টাকার মান নির্দেশ দিয়ে কমানো হচ্ছে। এতে বাজারের প্রকৃত প্রতিফলন হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই মুদ্রানীতি ব্যাংকের কোনো কাজে আসবে না। কারণ মূল জায়গায় হাত দেওয়া হয়নি। বরং করেছে উলটো। ব্যাংক ঋণের সুদহার না বাড়িয়ে বাড়িয়েছে নীতি সুদহার। এর কোনো অর্থ হয় না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, দুই হাত বেঁধে সাঁতার কাটতে দিলে যেমন সাঁতার কাটা যায় না, তেমনি মূল সুদ না বাড়িয়ে নীতি সুদ হার বাড়ানোর ফলে কোনো কাজ হবে না। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান-কিছুই হবে না। যেমন আছে তেমনই থাকবে। কোনো পরিবর্তন হবে না। অথচ এই সময়ে দরকার ছিল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ। যা মুদ্রানীতিতে নেই।

আরও পড়ুনঃ  নগরীতে হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, করোনার পর ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও পুরো মাত্রায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এখনও নানা সংকটে ঘুরছে। এই অবস্থায় তাদের সহায়তা করার মতো একটা মুদ্রানীতি দরকার ছিল। কিন্তু মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবার নীতি সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোও বাধ্য হবে ঋণের সুদের হার বাড়াতে। ঋণের সুদের হার বাড়লে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের জন্য পণ্যমূল্য কমাতে তদারকি জোরদার ও আমদানির বিকল্প পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে হয়তো এককভাবে এদিকে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। তবে এখনও সময় আছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।