নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার। রাত ৮:৪৪। ১৬ অক্টোবর, ২০২৫।

রাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন যারা : প্রথম ভিপি মনিরুজ্জামান সবশেষ রিজভী

অক্টোবর ১৬, ২০২৫ ৬:২৫
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে ক্যাম্পাস। ১৭টি কেন্দ্রে ৯১৮ প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার।

১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতি বছর রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ৭২ বছরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মোটে ১৬ বার।

এর মধ্যে প্রথম দুবার ভোট হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন (রাসু) নামে; বাকি ১৪ বার হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নামে।

এখন পর্যন্ত যে ১৬ বার ছাত্র সংসদ গঠন হয়েছে, তার মধ্যে ১০ বারই হয়েছে পাকিস্তান আমলে। স্বাধীন দেশে ৫৫ বছরে সপ্তম বারের মতো বৃহস্পতিবার ভোট দিচ্ছেন মতিহারের শিক্ষার্থীরা। এতে মোটাদাগে ৯টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

এর আগে সবশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। সেই সংসদে (১৯৮৯-৯০) ভিপি হয়েছিলেন ছাত্রদলের প্রার্থী রুহুল কবির রিজভী। তিনি বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। আর জিএস হয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস বাবু।

রাকসুর অনেক ছাত্র প্রতিনিধি পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সবশেষ ভিপি রিজভী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতিও হয়ে ছিলেন। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

আরও পড়ুনঃ  রাতের অন্ধকারে কোনো নির্বাচন দিতে চাই না: সিইসি

প্রথম ভিপি ছিলেন মনিরুজ্জামান মিয়া। যিনি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ ও অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এটি সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত। রাকসু প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সৎ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরি করা, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় পরিসরে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

১৯৫৬ সালে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইতরাত হোসেন জুবেরীর কাছে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি উত্থাপন করা হয়। এরপর ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের হস্তক্ষেপে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় এবং ওই বছরই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে মনিরুজ্জামান মিয়া ভিপি ও আব্দুর রাজ্জাক খান জিএস নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারি হলে রাকসুর কার্যক্রম স্থগিত হয়। ১৯৬২ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পুনরায় রাকসু চালু হয় এবং এরপর থেকে নিয়মিতভাবে ১৪ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন ও প্রশাসনিক জসর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও রুহুল কুদ্দুস বাবু যথাক্রমে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। এরপর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর রাকসু নির্বাচন স্থগিত ছিল।

আরও পড়ুনঃ  এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ

কসুর ভিপি ও জিএসদের ধারাবাহিক তালিকা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে যারা ভিপি (সহ-সভাপতি) ও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন—

১৯৫৬-৫৭ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর প্রথম ভিপি ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান মিয়া, যিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত হন। একই সময় জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেন মো. আব্দুর রাজ্জাক খান। পরের বছর ১৯৫৭-৫৮ সালে ভিপি ছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী এবং জিএস পদে ছিলেন মো. আব্দুর রাজ্জাক খান। ১৯৬২-৬৩ সালে ভিপি নির্বাচিত হন শেখ মো. রুস্তম আলী, জিএস ছিলেন মো. বজলুর করিম। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ মাজহারুল হক (ভিপি) ও মো. আব্দুর রউফ (জিএস)। ১৯৬৪-৬৫ সালে আব্দুর রাজ্জাক ভিপি এবং বায়েজীদ আহম্মদ জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫-৬৬ সালে ভিপি ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ), আর জিএস ছিলেন সরদার আমজাদ হোসেন। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন বায়েজীদ আহম্মদ, জিএস আব্দুস সাত্তার।

আরও পড়ুনঃ  গাজায় ত্রাণের প্রবেশ সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত বাতিল করল ইসরায়েল

১৯৬৭-৬৮ সালে এ.এফ.এম জামিরুল ইসলাম ভিপি এবং মো. আব্দুর রহমান জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর ১৯৬৮-৬৯ সালে ভিপি ছিলেন মো. আব্দুর রহমান, জিএস ছিলেন জালাল উদ্দিন সেলিম। ১৯৬৯-৭০ সালে মীর শওকত আলী ভিপি ও আব্দুস সামাদ জিএস পদে ছিলেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে রাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন মো. হায়দার আলী (ভিপি) ও আহমেদ হোসেন (জিএস)। ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন নুরুল ইসলাম ঠান্টু, জিএস ছিলেন শামসুল হক টুকু। ১৯৭৪-৭৫ সালে দায়িত্বে ছিলেন ফজলুর রহমান পটল (ভিপি) ও রফিকুল ইসলাম (জিএস)।

দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৮০-৮১ সালে রাকসু পুনর্গঠিত হয়। সেসময় ভিপি ছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা (বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী), জিএস ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তী মেয়াদে ১৯৮৮-৮৯ সালে ভিপি ছিলেন রাগীব আহসান মুন্না (ছাত্র মৈত্রী), জিএস রুহুল কুদ্দুস বাবু।

সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ সালে রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে ভিপি হন রুহুল কবির রিজভী (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল), আর জিএস পদে ছিলেন রুহুল কুদ্দুস বাবু, যিনি ছাত্রলীগ ও জাসদ ঘরানার ছিলেন।

এবার ছাত্র সংসদের ২৩টি পদে ৩০৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।