স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানা এলাকার পশ্চিম বালিয়া শান্তির মোড় গুচ্ছগ্রাম এলাকায় একযোগে একাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার সময় দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিক মারধরের শিকার হন এবং তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
হামলার শিকার সাংবাদিকের নাম শাকিল আহম্মেদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন এবং বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিক প্রধান সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে হামলাকারীরা তাকে মারধর করে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)-এর হস্তক্ষেপে হামলাকারীরা মোবাইল ফোনটি ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পবা-মোহনপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের নির্দেশে গিয়াস, টিয়া আলম, কাওসার, সাকাওয়াত, হড়গ্রাম ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সামাউন কবীর হেলাল, ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হুমায়ন কবীর আওয়াল, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাপ হোসেন, হড়গ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুর আলম রেন্টুর বাসায় হামলা চালায়। অভিযোগ রয়েছে, রেন্টুর বাসায় বিএনপির বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো—এ কারণেই সে সময় হামলা চালানো হয়।
পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার পতনের পর এসব ব্যক্তিরা পবা-মোহনপুরের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মিলন-এর হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন। অভিযোগ রয়েছে, দল পরিবর্তনের পরও তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন।
সর্বশেষ গত নভেম্বরে সাবেক প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী কবীর হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্তির জনসভায় শফিকুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে মঞ্জুর আলম রেন্টুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে উপরোক্ত ব্যক্তিরা দেশীয় অস্ত্রসহ মঞ্জুর আলম রেন্টুর বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, হামলাকারীরা রেন্টুর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি করে এবং ৯ বছর বয়সী শিশুকে তার বাবাকে হাজির করার শর্তে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে টানাহেঁচড়া চালায়। এ সময় হামলাকারীরা আরও অন্তত ৫টি বাড়িতে ভাঙচুর করে। পাশাপাশি একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীরা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করতে করতে এলাকা ত্যাগ করে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ সন্ধ্যায় পুনরায় মঞ্জুর আলম রেন্টুর বাসায় হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজশাহী মহানগর সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন বলেন,“কাশিয়াডাঙ্গার এই ন্যাক্কারজনক হামলার সঙ্গে আমাদের বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই। বিএনপি কখনো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের রাজনীতি করে না। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা মূলত আওয়ামীলীগের সুবিধাবাদী ও অপরাধী চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আহ্বান জানাই, দলীয় পরিচয় নয়, অপরাধের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান জনি বলেন, “মঞ্জুর আলম রেন্টু দলের একজন পরীক্ষিত, ত্যাগী ও সাহসী নেতা। তার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই পরিকল্পিতভাবে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। নারী ও শিশুর ওপর হামলা এবং সাংবাদিককে মারধর করে যে বর্বরতা দেখানো হয়েছে, তা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই হামলা শুধু একজন নেতার ওপর নয়, এটি গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের ওপর সরাসরি আঘাত।
এলাকাবাসী দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
