নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ সোমবার। রাত ৪:৪৭। ১৮ আগস্ট, ২০২৫।

রাজশাহীতে সাড়ে ৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী

আগস্ট ১৭, ২০২৫ ১০:৫৫
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর ৪ জেলার কমপক্ষে সাড়ে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে অনেক বাড়িঘর। রোববার সকাল থেকে পদ্মা নদীর পানি কমছে। এর ফলে ভাঙন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।

বিভাগের আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, এরপর রাজশাহী। কিছু বসতবাড়ি তলিয়েছে নাটোর ও নওগাঁয়। সরকারি হিসেবে রাজশাহীতে ১ হাজার ৭৩৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার, নাটোরে ৮০ ও নওগাঁয় ২৫ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি।

সম্প্রতি পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। এছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতুলি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘর ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাহার আলী জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যায় শিবগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এ উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৩ মেট্রিক টন চাল ও ৭৫ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ইউএনও নুরুল ইসলাম জানান, দুই ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়েছে দুই হাজার পরিবার। প্লাবিত হয়েছে ৬০০ হেক্টর ফসলি জমি। চাল, শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নিয়ে তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বেসরকারি সংগঠনও এগিয়ে আসছে।

আরও পড়ুনঃ  ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে সীমান্ত বিষয়ক আলোচনা সম্ভব নয়: ম্যাক্রোঁ

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর বাঘা, পবা, গোদাগাড়ী ও চারঘাটের অনেক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ থেকে এবারও অনেক লোকজন তাদের ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু নিয়ে এ পারে আশ্রয় নিয়েছেন। সবচেয়ে কষ্টে আছেন বাঘার চক নারায়ণপুর, পবার মিডিল চর ও চর মাজারদিয়ারের বাসিন্দারা। মিডিল চরের চারপাশ ডুবে গেছে। পানি ঢুকেছে বাড়িতে। চর মাজারদিয়া চরেরও সবগুলো ঘরবাড়ি হাঁটুসমান কিংবা একগলা পানিতে ডুবে গেছে। ফলে অনেকে গবাদিপশু নিয়ে এ পারে রাজশাহী শহরের বেতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। আর যারা আসতে পারেননি তারা চরেই কোথাও একটু উঁচু জায়গা পেলে সেখানেই গবাদিপশু ও শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

এই চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম এখনও কোথাও যেতে পারেননি। রোববার সকালে একগলা পানি মাড়িয়ে তাকে পাশের আরেকটি ডুবে যাওয়া বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আসতে দেখা যায়। মনোয়ারা বেগম বলেন, জন্ম থেকে তিনি এই চরেই বাস করছেন। ভাঙনের কারণে তাদের চারবার বাড়ি নতুন জায়গায় সরাতে হয়েছে। এবার না ভাঙলেও ডুবে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয় কি না, তা নিয়ে এখন আছেন আতঙ্কে।

রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, জেলায় পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৭ জন। এরমধ্যে বাঘা, চারঘাট, পবা, গোদাগাড়ী ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। তারা এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৮৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে রাবিতে নিরাপত্তা বিষয়ক মতবিনিময় সভা

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। এবার বাড়তে বাড়তে পানি ১৭ দশমিক ৪৯ মিটারে উঠেছিল। এরপর শনিবার সকাল ৬টা থেকে পানি ধীরে ধীরে কমছে। রোববার দুপুর ১২টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৩৫ মিটার।

এদিকে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে গত শনিবার ভোররাতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তালপাতিলা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের তালপাতিলা ও উত্তর চকরামপুর গ্রামের কমপক্ষে ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নওগাঁর রানীনগর ও আত্রাই এবং রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়।

নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়দুর রহমান বলেন, বাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে প্রায় ২০০ বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। সম্প্রতি লাগানো আমন ধান ডুবে গেছে। তবে মাত্র ২৫টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। অন্যরা সহায়তা পায়নি।

জানতে চাইলে মান্দার ইউএনও আখতার জাহান সাথী দাবি করেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা পঁচিশের বেশি নয়। তিনি বলেন, ‘এর বেশি হলে তো আমাকে জানানো হতে। আমি জানি না।’

আরও পড়ুনঃ  প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে উধাও পাবনার এএসআই

নাটোরের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম শাহা আলম মোল্লা জানান, লালপুর উপজেলায় পদ্মা তীরের ৮০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। বন্যা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নাটোরের সবগুলো উপজেলায় মোট ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।

বিভাগের সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। সিরাজগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল বাছেদ জানান, যমুনা নদীর পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার। রোববার সকালে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা হলে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।

বগুড়ার ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলায় নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। তবে ঘরবাড়ি এখনও প্লাবিত হয়নি। এখানে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনায় এখনও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে তুলসিগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জয়পুরহাট সদর ও আক্কেলপুর উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল করিম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনও বন্যা সৃষ্টি হয়নি। তবে তুলসিগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটা বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। নদীটা সদর উপজেলা হয়ে আক্কেলপুর গেছে। নদীতে পানি বাড়ছে। আরও পানি বাড়লে এ দুই উপজেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।