সাইদ সাজু, তানোর : রাজশাহী থেকে অফিস করেন বেশীর ভাগ চাকরী জীবি। ফলে, আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্র তানোর উপজেলা। তানোর উপজেলায় কর্মরত এসব চাকরী জীবির মধ্যে রয়েছেন সরকারী, বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, হাসপাতাল ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা-নার্স, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত চাকরীরা। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগই চাকরী জীবি বসবাস করছেন রাজশাহীতে।
অফিসের দিনে রাজশাহী থেকে তানোরে এসে অফিস করে আবার চলে যান রাজশাহীতে। তানোরে কর্ম করলেও এসব চাকরী জীবিরা তানোরে খরচ করছেন না। তারা তাদের আইয়ের টাকা খরচ করছেন রাজশাহীতে। ফলে, আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে তানোর। একই সাথে এসব কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের ছেলে মেয়েরাও পড়া লিখা করেন রাজশাহীতে। ফলে, মান সম্মত শিক্ষাসহ ওইসহ সেব মুলক প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিয়েও সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,তানোর উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনে কেউ থাকেন না। ফলে, উপজেলা ক্যাম্পাসের সরকারী আবাসিক ভবন গুলো বেশীর ভাগই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অপর দিকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরে চিকিৎসা ও নার্সদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবন গুলোতেও থাকেন না চিকিৎসারা। ফলে, একদিকে সরকার যেমন হারাচ্ছেন রাজস্ব, তেমনি কাংক্ষিত সেবা ও আর্থ সামাজিক উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়ছে তানোর।
অপর দিকে বে-সরকারী সংস্থা এনজিও ও সায়েত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানসহ কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা কর্মচারীর বেশীর ভাগই বসবাস করছেন রাজশাহীতে। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন রাজশাহীতে বসবাসকারীদের তালিকায়। তানোরে কর্মরত এসব চাকরী জীবিরা সকালে বাসে চড়ে তানোরে এসে অফিস করে আবার চলে যান রাজশাহীতে। এর মধ্যে অনেকেই আবার মটরসাইকেল যোগে রাজশাহী থেকে তানোরে এসে অফিস করে তড়িঘড়ি করে আবার চলে যাচ্ছেন বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।
সচেতন মহলের ব্যক্তিরা বলছেন, তানোরে কর্মরত চাকরী জীবিরা তানোরে কর্ম করে আয় করা অর্থ তানোরে খরচ করেন না। তারা রাজশাহীতে বসবাস করার সুবাদে ব্যয় করেন রাজশাহীতে। ফলে, আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়ছে তানোর। ফলে, তানোর মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি দীর্ঘদিনেও। একই সাথে তানোরে নেই সরকারী ভাবে নির্মিত কোন মার্কেট। অন্য উপজেলার থেকে ব্যবসা বানিজ্যসহ উন্নয়নের দিক থেকে অন্য যেকোন উপজেলা থেকে পিছিয়ে রয়েছে তানোর উপজেলা। দীর্ঘদিন ধরে তানোর থানা মোড়ে যানজট নিরসনে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।
তানোর থানা মোড়ে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, সকাল থেকে শুরু করে বেলা ১০ পর্যন্ত রাজশাহী থেকে আসা বাস থেকে হুড়াহুড়ি করে নামতে দেখা যায় কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষক শিক্ষিকাসহ তানোরে কর্মরত বিভিন্ন পেশায় কর্মরত চাকরী জীবিদের। আবার দুপুর থেকেই শুরু করে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ওই সব কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষক শিক্ষিকাসহ কর্মরতদের দেখা যায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে। এসব পেশাজীবীর অনেকেই বাসে সিট ধরার জন্য দৌড়া দৌড়ি ও হুড়াহুড়ি করে বাসে উঠতেও দেকার দৃশ্য চোখে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই। এমন দৃশ্য দেখে অনেকেই হাসা হাসিও করেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যে এলাকায় আয় ও ব্যয় বেশী হবে সেই এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও দৃশ্যমান হবে। এসব পেশা জীবিরা তানোনে বসবাস করলে, তারা তাদের আইয়ের পুরো অংশই তানোরেই ব্যয় করতেন। যেহুতু তারা তানোরে বসবাস করেন না, তাই তারা তানোরে কোন অর্থ ব্যয় করেন না। ফলে, তানোরে ব্যবসা বানিজ্যসহ আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না। অপর দিকে এসব পেশাজীবীদের ছেলে মেয়েরাও তানোরে পড়া লিখা করেন না। ফলে, মানসম্মত শিক্ষার গুনগত মান নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায় বলে জানান সচেতন মহলের একাধিক ব্যক্তি।