নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বুধবার। সকাল ৭:৩৬। ২১ মে, ২০২৫।

শত অনুরোধেও বাসারের কাছ থেকে ঘোড়া উপহার নেননি সেই মনু মিয়া

মে ২০, ২০২৫ ১১:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের মনু মিয়া একজন গোরখোদক। গত পঞ্চাশ বছর ধরে তিন হাজারের বেশি মানুষের শেষ ঘর- কবর খুড়েছেন মনু মিয়া। কেউ মারা গেছে শুনলেই খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় করে ছুটে যান কবরস্থানে। হ্যাঁ, ঘোড়ায় করে ছুটতেন মনু মিয়া।

কিন্তু মনু মিয়ার ঘোড়াটা আর নেই। অসহায় মনু মিয়া চিকিত্‌সার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। এই সময় কে বা কারা তার ঘোড়াটাকে মেরে ফেলেছে। মনু মিয়ার কাছে ঘোড়াটা ছিলো সন্তানের মতো। এই ঘোড়ার মৃত্যুসংবাদও তাকে দিতে পরিবারের লোকজন ভয় পাচ্ছিলেন- পাছে মনু মিয়া কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কিছু করে ফেলেন!

মনু মিয়ার ঘোড়া নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হলো। কয়েকটা দিন লোকেরা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করলো। তারপর? তারপর যা হয়, নতুন ইস্যু এলো। লোকেরা একজন গোরখাদকের ঘোড়ার কথা ভুলে গেলো।

একজন ভুললেন না, তিনি এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসার। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। বিনিময়ে আমার কবর খোঁড়া পর্যন্ত আল্লাহ উনাকে বাঁচিয়ে রাখুন।’

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশে ঝড় তুলে আইপিএলে ডাক পেলেন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির পেসার

কী ভয়াবহ শক্তিশালী দুটো বাক্য! কী ক্ষোভ, কী অভিমান এবং কী ভালোবাসা এই বাক্য দুটোতে! বহুল আলোচিত ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’-তে বাসারের ইনোসেন্ট লুক আজও ভুলতে পারে অনেক দর্শক। মনু মিয়ার ঘোড়া নিয়ে তার স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই বলছেন, খায়রুল বাসার আসলে একজন নায়ক।

বাসার শুধু ফেসবুক স্ট্যাটাসেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান অভিনেতা। সেখানে দীর্ঘ আলাপ হয় তাদের মধ্যে। খায়রুল বাসার বলেন, ‘তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়েছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেছেন নিজের ঘোড়া। সেই ঘোড়াটিকে দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলার কথা শুনে তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। কথার এক পর্যায়ে তাকে বলি, ‘একটি ঘোড়া আপনাকে কিনে দিতে চাই।’ কিন্তু তিনি ঘোড়া নিতে চান না। কোনোভাবেই তাকে রাজি করাতে পারিনি; বরং তিনি বারবার এটাই জানিয়েছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলে সাতটা ঘোড়া কিনতে পারবেন।’

আরও পড়ুনঃ  হাসপাতাল থেকে ফিরে যা বললেন মিশা

ঘোড়া মারা যাওয়ার কথা শুনে আহত হননি মনু মিয়া। এতেও অবাক হয়েছেন অভিনেতা। বাসার জানান, ঘোড়া মারা যাওয়া নিয়ে তার মধ্যে কোনো দুঃখবোধ নেই। তিনি মনে করেন, তার আছে বলেই গেছে। যার আছে, তার যায়। এতে কষ্ট হচ্ছে না।

বাসার বললেন, ‘এই মনু মিয়ার সঙ্গে আলাপ হওয়ায় বুঝতে পারলাম, তিনি কারো অনুদান নিতে চান না। সাধ্যের মধ্যেও অনেক কষ্টে তিনি ঘোড়া কিনেছেন। তিনি কোনো দিন কারো কোনো ক্ষতি করেননি। মনু মিয়ার জীবনযাপন মুগ্ধ করেছে আমাকে।’

মনু মিয়া ও বাসার দুজনেই কিশোরগঞ্জের মানুষ। বাসারের মনে হয়েছে, মনু মিয়া বয়স অনুযায়ী বেশ শক্ত। মানসিকভাবেও দৃঢ়চেতা। এ ধরনের মানুষ সহজেই ভেঙেন পড়েন না। তবে কথার এক পর্যায়ে মনু মিয়া ‘হতাশ’ করেন এই অভিনেতাকে। সেটাও বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেন এই অভিনেতা।

আরও পড়ুনঃ  ‘শাকিবের সাথে কাজ করাটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার’

দেবব্রত মুখার্জি নামের এক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে নায়কের খুব অভাব। বড় বড় দার্শনিক আলাপ করে গেছেন, কেনো সমাজে নায়ক থাকাটা জরুরী। কেনো আমাদের নায়ক তৈরী করতে হয়, সেই আলোচনায় আজ না যাই। তবে এটুকু বলতে পারি যে, বাসারের মতো নায়ক আমাদের খুব দরকার। দ্রোহ দরকার, অভিমান দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার ভালোবাসা। খায়রুল বাসারের মধ্যে সেই ভালোবাসাটা আছে। মনু মিয়ার ঘোড়া নিয়ে তার প্রেম এখানে শেষ হয়নি। তিনি সত্যি সত্যি মনু মিয়াকে খুজে বের করেছেন। কী অকৃত্রিম ভাষায় দু জনে গল্প করেছেন! আর সেখানেই মনু মিয়া খায়রুল বাসারকে শুনিয়েনে জীবনের এক অসাধারণ দর্শন- ‘নাই বেডার নাই, আছে বেডারই যায়।’-ইত্তেফাক

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।