নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ শুক্রবার। রাত ৩:৫১। ১৭ অক্টোবর, ২০২৫।

শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো রাকসু নির্বাচন, ফলাফলের অপেক্ষা

অক্টোবর ১৭, ২০২৫ ১:৩১
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। তবে ৪টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় প্রবেশ করেছিলেন, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সব কেন্দ্রে একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে কোনো রকম বিঘœ ছাড়াই ভোট দিতে সক্ষম হয়েছেন।

নয়টি ভবনে স্থাপন করা ১৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে বাড়ে ভোটারের উপস্থিতি। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোটগ্রহণ নিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্রার্থীরা পৃথক সংবাদ সম্মেলনে পরস্পরকে অভিযোগ করেছেন।

রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের নিয়ে আসা হয়। সেখানে ভোটগণনার ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ভোটগণনা সরাসরি মিলনায়তনের বাইরে থেকে দেখতে পাবে ভোটা ও প্রার্থীরা। এই লক্ষ্য মিলনায়তনের সামনে বাশের ব্যরিক্যাড দেওয়া হয়েছে। সেখানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দিনভর ভোট কেন্দ্রগুলোর দিতে চোখ থাকলেও এখন ভোট গণনার দিতে সবার চোখ। তবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ভোটগণনা শুরু করা হয়নি। কথা ছিল বিকেল পাঁচটা থেকে ভোটগণনা শুরু হবে।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট, মেইন গেট ও কাজলা গেটে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। প্রত্যেকের পরিচয় শনাক্তের পরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে ক্যাম্পাসের ভেতরে। এমনভাবে দিনভর চলে চেকপোস্ট। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  বিচ্ছেদ ঘোষণার পর হঠাৎ রাকিবকে নিয়ে পোস্ট মাহির

এছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রার্থীদের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রার্থীরা নিজেদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। একই সঙ্গে প্রার্থীদের সমর্থকদের ভোটারদের ভোট প্রদানে জন্য বলা হয়। নিজের ভোট নিজে দেওয়া ছাড়াও প্রার্থী ও ভোটারদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। সবমিলে এক আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এদিন বিকেলেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ব্যালট বাক্সগুলো কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, ভোট গণনা হচ্ছে ছয়টি অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গায় এলইডি স্ক্রিনে ফলগণনা সরাসরি দেখানো হচ্ছে। সবশেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে সব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকছে।

তিনি বলেছেন, ভোট গণনার সুবিধার্থে ১০০টি করে ব্যালট দিয়ে পৃথক বান্ডেল করা হবে। এ বান্ডেলের ভোট গোনা হবে ওএমআর মেশিনে, যা পর্যবেক্ষণ করবে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সব মিলিয়ে তিন ধাপে চূড়ান্ত ফল তৈরি হবে। একটি হলের ফল তৈরি শেষে আরেকটির গণনা শুরু হবে। তাতে ২৮৩টি পদের ফল জানাতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।

এর আগে, সকাল সোয়া ৭টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি বিতরণ শুরু হয়। এ সময় প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে হালনাগাদ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ওএমআরযুক্ত ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২৪৭ জন, যার মধ্যে নারী ২৬ জন। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদে ৫৮ জন এবং হল সংসদের ১৫টি পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী লড়াই করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এই সংখ্যা রাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বাধিক। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৬ জন। বাকি ২০টি পদে ২০০ জন লড়াই করছেন। ৯টি ভবনে ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের রাকসু ও হল সংসদের মোট ৪৩টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  এবার একশ’ হলো না বাংলাদেশের, হারল বিশাল রানে

নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ
রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। ভোট পড়েছে ২০ হাজার ১৮৭টি। শতকরা হার ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে সৈয়দ আমির আলী হলে, যেখানে ভোট পড়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে শাহমখদুম হলে ৭৭ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৭৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করেছেন। শহীদ শামসুজ্জোহা হল ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বিজয়-২৪ হল ৭৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, শেরে বাংলা ফজলুল হক হলে ৭৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, মতিহার হল ৭৩ দশমিক ২২ শতাংশ, শহীদ হবিবুর রহমান হল ৭১ দশমিক ৫৫ শতাংশ, মাদার বখশ হল ৭১ দশমিক ২৫ শতাংশ, শহীদ জিয়াউর রহমান হল ৭০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, নবাব আব্দুল লতিফ হল-৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ। ছাত্রীদের হলের মধ্যে মুন্নুজান হলে ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ জুলাই-৩৬ হল ৬৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, তাপসী রাবেয়া হলে ৬৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেগম খালেদা জিয়া ৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ, রহমতুন্নেসা হল ৬০ শতাংশ ৭০। অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে রোকেয়া হলে, মাত্র ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্র বেশি ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  আন্দোলনরত শিক্ষকরা ফের শহীদ মিনারে, কাল শাহবাগে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা

এই নির্বাচন উপলক্ষে একটি নির্দেশনা জারি করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন, ১৯৯২-এর ২৬-এর ১(ঢ); ২৯-এর (১)(ক), (খ) ও ৩০ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের এক দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরের দিন, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৭ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত মোট তিন দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও তৎসংলগ্ন এলাকার চতুর্দিকে ২০০ গজের মধ্যে সকল প্রকার মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মাইকিং, আতশবাজি, পটকা ফুটানোসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার, অস্ত্রশস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, ছোরা বা লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ফল তৈরি হবে তিন ধাপে
নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, নয়টি ভবনে ভোট গ্রহণ শেষে সব ব্যালট বাক্স নেওয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভোট গণনার সুবিধার্থে ১০০টি করে ব্যালট দিয়ে পৃথক বান্ডেল করা হবে। এ বান্ডেলের ভোট গোনা হবে ওএমআর মেশিনে যা পর্যবেক্ষণ করবে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সবমিলিয়ে তিন ধাপে চূড়ান্ত ফল তৈরি হবে। একটি হলের ফল তৈরি শেষে আরেকটির গণনা শুরু হবে। তাতে ২৮৩টি পদের ফল জানাতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।