হেলাল উদ্দীন, বাগমারা : সারা বছর পেঁয়াজ ও রসুন সরবরাহের ঘারতি মেটাতে দেশর বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ মডেল ঘর তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের ঘরে পেঁয়াজ বা রসুন সংরক্ষণ করে রাখলে পচনশীল এই কৃষি পণ্যটি সারা বছরই ভালো থাকে। তাই কৃষক এবং পেঁয়াজের বাজার দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই মডেল ঘর নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর’। কিন্তু প্রকৃত পেয়াজ-রসুন চাষী নির্বাচনে অনিয়ম করায় মডেল ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। অপরদিকে যারা পর্যাপ্ত পেঁয়াজ ও রসুন উৎপাদন করেছে সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো পচে নষ্ট হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে সারা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৬০০টি মডেল ঘর নির্মাণ করেছেন তাঁরা।দেশীয় প্রযুক্তিতে বাঁশ,কাঠ,কালার টিন,আরসিসি পিলার ও এ্যাবুনাইট সীড দিয়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ঘরের ভিতরে তিনটি করে স্তর করা রয়েছে। যেখানে প্রতিটি ঘরে ৫জন কৃষক মোট ৪৫০ মন পর্যন্ত পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করতে পারবেন। কিন্তু ব্যবহার না করায় কিছু ঘর নষ্ট হতে চলছ।
বৃহস্পতিবার (২৪জুলাই) সরজমিন গিয়ে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের নাগপাড়া গ্রামে মো. হামিদুল ইসলামের নামে নির্মিত মডেল ঘারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘরটি কেন এই অবস্থা জানতে চাইলে হামিদুর বলেন, এ বছর আমি কোন পেয়াজ চাষ করিনি। অন্য সদস্যরাও কেউ এই ঘরে পেঁয়াজ রাখতে আসেনি। তাই ঘরটি ফাঁকাই পড়ে আছে।
উপজেলার সূর্যপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম তার নামে নির্মিত ঘরে নিজের পেয়াজ রেখেছেন ৩০ মন এবং পার্শ্ববর্তী শহিদুলের ২০ মন। ৪৫০ মন ধারণ ক্ষমতার ঘরটির অবশিষ্ট অংশ ফাঁকাই পড়ে আছে। তিনি বলেন আমি সামান্য পেঁয়াজ চাষ করি। অন্যরাও ঘরে পেঁয়াজ রাখতে চায় না।
গোয়ালপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদেরকে ওজন পরিমাপের স্কেল এবং বৃষ্টির পানি রোধক ত্রিপল দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
প্রকল্পটির রাজশাহী অঞ্চলের পরিদর্শক সুমন্ত হালদার সমকালকে বলেন, ঠিকাদারের সরবরাহকৃত ওজন পরিমাপক স্কেল নিম্নমানের হওয়ায় তা বিতরণ করা হয়নি। মডেল ঘর নির্মাণে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করার সময় তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়েছেন। ঘর পাওয়া চাষী নির্বাচনে কোন অনিয়ম করা হয়নি।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মদিনা ট্রেডার্স’ এর মালিক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই প্রকল্পের সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা উপজেলার বিভিন্ন কার্যক্রমে আমাদের অফিস ব্যবহার করেন। কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের ব্যাপারে আমাদের সাথে কোন আলাপ আলোচনা করেননি।
প্রকল্পের পরিচালক মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণে চাষীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বাজার সংযোগে সহযোগিতা করা এবং পচন রোধ করতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাগমারা উপজেলাতে মোট ৩০টি পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ মডেল ঘর রয়েছে।