অনলাইন ডেস্ক : একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পপতি সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নাম সম্প্রতি একটি মামলার বিবাদীদের তালিকায় উঠে আসায় বিভিন্ন মহলে বিস্ময় ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। শিক্ষা ও মানবকল্যাণে অগ্রণী ভূমিকার জন্য পরিচিত এই শিল্পপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন অনেকেই। তাদের বক্তব্য, একজন ব্যাংক-খেলাপি ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দুঃখজনক। সুফি মিজান দেশের বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা উচিত নয়।
যদিও মামলার বাদী বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কাউকে মামলার বিবাদী করেননি। তার ভাষ্য, প্রকৃতপক্ষে সুফি মিজানসহ এই মামলার সব বিবাদী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী। এর আগে অনেক মামলায় প্রকৃত কুশীলবরা আড়ালে থেকে গেছেন। তাই তিনি এই মামলায় প্রকৃত আসামিদের নাম উল্লেখ করেছেন।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হতাহতের ঘটনা দেখিয়ে গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার আদালতে একটি নালিশি মামলা হয়েছে। মামলাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মী, দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা ও শোবিজ তারকাসহ মোট ১৯৭ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ বিষয়ক প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার অপরাধ উল্লেখ করা হয়। গত ২০ মার্চ প্রথমে মামলাটি করা হয়। প্রথমে আদালত শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন একই ঘটনায় আর কোনো মামলা হয়েছে কি না। পুলিশ হয়নি বলে প্রতিবেদন দিলে ৩০ এপ্রিল আদালত বাদীর অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দেন।
এদিকে, মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পপতি সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে বিবাদী করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়। একটি পক্ষের দাবি, সুফি মিজানকে ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মামলাটিতে বিবাদী করা হয়েছে। এ নিয়ে বুধবার (৭ মে) চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে সুফি মিজানকে মামলাটি থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, আদালতে করা মামলাটি সম্প্রতি থানায় জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মুনসুর। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি থানায় রেকর্ড করতে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। তদন্তে যা উঠে আসবে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
মামলাটির অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা গেছে বাদী এই মামলার ভুক্তভোগী নন। তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের পক্ষে মামলাটি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের লক্ষ্যে সর্বাত্মক আন্দোলন চলছিল। ওইদিন এক দফা দাবি আদায়ে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল পরিবাগ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের মোড়ে পৌঁছালে ওঁৎ পেতে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্য সন্ত্রাসীরা মিছিল অবরোধ করে। ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার জন্য গুলিবর্ষণ করে। তখন মিছিলে অংশ নেওয়া মাদ্রাসাছাত্র সাইফুদ্দিনের চোখে গুলি লাগে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু।
মামলাটির অভিযোগে সুফি মিজানের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, তিনিসহ কয়েকজন সাবেক এমপি, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী এবং সংগঠকরা ক্যাবিনেটের গুম ও খুনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের কর্মী বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন।
যদিও বুধবার চট্টগ্রামের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, শিল্পবিপ্লবের পথিকৃৎ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পপতি সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান একজন ধার্মিক সুন্নি মুসলমান। তিনি একজন সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবসায়ী। ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে তিনি কখনোই খেলাপি হননি। তিনি বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, হিফজখানা, এতিমখানা ও অসংখ্য শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা, সংস্কার ও সম্প্রসারণে অবদান রেখেছেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা শিল্পপতি সুফি মিজানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান। তারা বানোয়াট ও কাল্পনিক এই মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার কাছে।
সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের প্রতিষ্ঠান পিএইচপিতে কর্মরতরা তার সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করে জানিয়েছেন, তিনি একজন নীতিবান ও মানবিক উদ্যোক্তা। কর্মপরিবেশে তিনি সবসময়ই স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখেন। কর্মীদের প্রতি তার দায়িত্বশীল আচরণ এবং নৈতিক নেতৃত্ব তাকে একজন আদর্শ কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তারা জানান, সুফি মিজান দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবকল্যাণে যে অবদান রেখেছেন, তা অনস্বীকার্য। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে তার অবদান হাজারো মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে তারা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন এবং দ্রুত তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কাউকে আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে মামলার আসামি করিনি। এখানে সবাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগী। খেলার মাঠে একজন গোল দিলেও এটির পেছনে বাকি খেলোয়াড়রা থাকেন। একইভাবে মামলাটিতে খেলায় অংশ নেওয়া সবাইকে আসামি করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সুফি মিজানদের মতো একেকজন একেকভাবে ভূমিকা রেখেছেন। জুলাই বিপ্লবে শত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের পক্ষ হয়ে আমি লড়ছি।