নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ সোমবার। দুপুর ২:১১। ২৭ অক্টোবর, ২০২৫।

স্বাভাবিক হলো বেনাপোল-পেট্রাপোল বাণিজ্য, স্বস্তিতে দুই বন্দরের ব্যবসায়ীরা

অক্টোবর ২৬, ২০২৫ ১০:২৩
Link Copied!

মনির হোসেন,বেনাপোল প্রতিনিধি : অবশেষে বেনাপোল কাস্টমস ও সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের মধ্যে ফলপ্রশু আলোচনার পর স্বাভাবিক হয়েছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য। এখন থেকে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত কাঁচা মালামাল বাদে অন্যান্য সকল মালামাল নিয়ে ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে। আর কাঁচা মালামাল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রবেশ করবে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা কিছুটা সময় বাড়ানো হবে। এর ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল।
তিনি বলেন, রোববার সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মহোদয়ের সাথে এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে কাগজপত্র বিহীন ও চোরাই পণ্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোনো পূর্ব ঘোষণা বা প্রস্ততি ছাড়াই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তাদের এমন সিদ্ধান্তে দুই দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দেয়। দুই দেশের সীমান্ত জুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা।

এদিকে পেট্রাপোল-বেনাপোল গেটওয়ে দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মারাত্মক পতন এবং জরুরি হস্তক্ষেপের জন্য রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি (মেইলে) দিয়েছেন ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

চিঠিতে তারা বলেছেন, পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত করিডোরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ পরিস্থিতি আমাদের দুই দেশের প্রতিষ্ঠিত সীমান্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রমের স্থিতিশীল দক্ষতার ওপর একটি বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে।

তারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের এ অচলাবস্থা নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিশেষ করে ২৪ঢ৭ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পোর্টের সক্ষমতা পুনাংদ্ধারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার উপর জোর দিয়েছেন। চিঠিতে তারা আগামী মঙ্গলবারের (২৮ অক্টোবর) মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে, তবে আমাদের সদস্যরা সাময়িকভাবে এই নির্দিষ্ট পোর্টের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে।

ভারতীয় সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন বলছে, ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা সত্তে¡ও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বেনাপোল পোর্টে ভারতীয় রপ্তানি যানবাহন গ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। যেখানে পূর্বে প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি ট্রাক পোর্টে প্রবেশ করত, বর্তমানে তা নেমে এসেছে প্রায় ২৫০টিতে। ফলে, বর্তমানে প্রায় ১,৫০০ রপ্তানি ট্রাক পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টে (আইসিপি) আটকে রয়েছে। এতে করে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব, অতিরিক্ত খরচ বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট দুই দেশের সিদ্ধান্তে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) ২৪ ঘণ্টা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের সব কাস্টমস হাউসকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বেনাপোলে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বন্দর ও কাস্টমস কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাবে প্রায়ই প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি হয় এ বন্দর দিয়ে। সময়সীমা কমে যাওয়ায় বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে প্রতিদিন আটকে থাকছে দেড় হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকে রয়েছে ফল, সবজি, মাছ, কসমেটিকস, রাসায়নিক কাঁচামালসহ দ্রত পচনশীল পণ্য, যেগুলোর অনেক কিছুই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সূত্র আরো জানায়, আগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ ট্রাক পণ্য বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করলেও এ সিদ্ধান্তের পর তা কমে ১৮০-২০০টিতে নেমে এসেছে।

আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির হিসাবে, প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ কোটি টাকার পণ্য খালাস আটকে থাকায় ব্যবসায়ীরা যেমন বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তারা বলছেন দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ অবৈধ মালামাল আমদানি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে সবার উপর দেষারুপ করে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করতে পারে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের এই একতরফা সিদ্ধান্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। পেট্রাপোল বন্দরে প্রতিদিন ট্রাক জটের মধ্যে পড়ছি। প্রতিদিন হাজারেরও বেশি ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে পেট্রাপোল বন্দরে। বিগত সময়ে রাত ১২ টা পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি চালু ছিল। আমরা বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশের এনবিআরের চেয়ারম্যান মহোদয়কে ইমেইল করে জানিয়েছি। পরে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও সিএন্ডএফ এজেন্টেসর মধ্যে ফলপ্রশু আলোচনার পর সমস্যার সমাধান হয়েছে জানতে পেরেছি। তারপরও সমাধান না হলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার পর বিষয়টি সমাধান হওয়ায় আমরাও খুশি। আমরা বন্দর পরিচালনা করি। তবে কাস্টমস অনুমোদন ছাড়া কোনো পণ্য ক্লিয়ার করা সম্ভব নয়। আমরা বন্দরের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করবো ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে।

তবে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি ভুল ব্যাখার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেভাবে বলেনি। কাঁচামালের ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমদানির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তুু একটি মহল সব মালের ক্ষেত্রে এ আইন প্রয়োগ করা হয়েছে বলে ভুল ভাবে প্রচার করেছে। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমন্বয়ের কারণে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি দ্রæত সমাধান করতে পেরেছি। ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের আর কোন সমস্যা থাকছে না।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।