অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘ ২৩৪ বছর ধরে এক সেন্টের পয়সা বা ‘পেনি’ তৈরি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এবার এই পয়সার উৎপাদন বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি। তবে উৎপাদন বন্ধ করলেও শিগগিরই পয়সার ব্যবহার বাতিল হয়ে যাবে—এমন নয়। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে লাখ লাখ দোকানে এটি চালু থাকবে এবং এটি আইনসম্মত মুদ্রা হিসেবেই বিবেচিত হবে।
রোববার সিএনএন জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরু থেকেই ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্রে পয়সার উৎপাদন বন্ধ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক ঘোষণায় এই তথ্য জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় খুচরা দোকান সমিতির মুখপাত্র জেফ লেনার্ড সিএনএনকে বলেন, ‘কানাডার অভিজ্ঞতা বলছে, তারা পেনির উৎপাদন বন্ধ করলেও প্রথম বছরে লেনদেনে কোনো বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি।’ তাঁর মতে, খুচরা দোকানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ পয়সার নগদ লেনদেন হয়—যা মোট খুচরা বিক্রির প্রায় ২০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় খুচরা বিক্রেতা ফেডারেশন’ জানিয়েছে, আগামী বছর উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরও তাদের সদস্য দোকানগুলো পেনির ব্যবহার চালিয়ে যাবে। তবে ব্যাংকে পেনির সরবরাহ কমে গেলে অনেকেই নগদ লেনদেন কাছাকাছি পাঁচ সেন্টে মিল করে নিতে পারে।
‘জাতীয় খুচরা বিক্রেতা ফেডারেশন’-এর সিনিয়র পরিচালক ডিলান জিয়ন বলেন, ‘ক্রেতাদের সেবা দেওয়া এবং রূপান্তর প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব সহজ রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের হিসেবে, বর্তমানে বাজারে আনুমানিক ১১৪ বিলিয়ন পেনি রয়েছে। তবে এগুলোর একটি বড় অংশই এখন ব্যবহার বহির্ভূত। বিশেষ করে—বিভিন্ন বাসায় পয়সা রাখার ব্যাংক, টেবিলের ড্রয়ার কিংবা আলমারিতে ধুলোমাখা অবস্থায় পড়ে আছে।
তথ্য বলছে, এই বিপুল পরিমাণ পেনি দিয়ে প্রায় ১৩ তলা সমান একটি ঘন ঘনক তৈরি করা যাবে! মানুষ অনেক সময়ই পেনি রাখে না। দোকানের কাউন্টারে রাখা দানপাত্রেই রেখে দেয়।
লেনার্ড বলেন, বাজারে এখনো বিপুল পরিমাণ পেনি থাকায় দোকানগুলো কিছুদিনের জন্য অভাব বোধ করবে না। তবে ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলো নতুন পেনি দেওয়া বন্ধ করলে দোকানগুলো স্বেচ্ছায় পাঁচ সেন্টে লেনদেন রাউন্ড করতে শুরু করবে। এটি কোনো সরকারি নিয়ম নয়, বরং প্রতিটি দোকানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে কার্ড কিংবা ইলেকট্রনিক লেনদেনে পেনি পর্যন্ত হিসাব চলবে; কেবল নগদ লেনদেনেই কম কিংবা বেশিতে রাউন্ড ফিগার প্রযোজ্য হবে।
কানাডা ২০১২ সালেই পেনি তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও দেশটিতে এখনো এটির ব্যবহার রয়ে গেছে। এটি এখনো আইনসম্মত মুদ্রা। অর্থাৎ, কেউ চাইলে এখনো পেনি দিয়ে কানাডায় পণ্য কিনতে পারেন। একই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রেও হবে বলে লেনার্ড আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘খুচরা ব্যবসার একটা কথা আছে—একটা পেনির জন্য কখনো একজন ক্রেতা হারিয়ো না। এখন মনে হচ্ছে, কথাটা আরও গভীরভাবে সত্য।’