স্টাফ রির্পোটার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়ে তাঁদেরকে সম্মানীয় আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পুর্নবাসন বোর্ড গঠন করেছিলেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে নির্যাতিতাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁদের বিয়ের ব্যবস্থা করে সমাজ ও পরিবারে আলোকিত জীবন দান করেছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে নারীদের মর্যাদা দান করে তিনি প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
রোববার রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আয়োজনে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ ২০২২ শীর্ষক বিভাগীয় পর্যায়ের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি ও সমবায়সহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। চাকুরি ক্ষেত্রে নারীদের ১০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। শহিদ পরিবারের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। শহিদ পরিবারের কন্যাদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ সমস্ত কাজের পিছনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার অবদান অপরিসীম বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও সমাজে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে নারীর ক্ষমতানের জন্য তিনি জয়িতা ফাউন্ডেশন তৈরি করেছেন। জয়িতা ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নারীদের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, জয়িতা ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী জয়িতাদের খুঁজে বের করে নারী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জয়িতা সম্মাননা প্রদান প্রথম শুরু হয়। ইতোমধ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি বিভাগে একটি করে জয়িতা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এসময় তিনি আনন্দের সাথে জানান, রাজশাহীতে খুব শীঘ্রই জয়িতা ভবন নির্মাণ করা হবে।
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফলে আজ নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও নারীরা বেশি সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৯০ লক্ষ নারীকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে ভাতা, খাদ্যসহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
এ সময় তিনি বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বন্ধ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০৪১ সালে আমরা যে উন্নত দেশে পরিণত হয়ে চাই সেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি নির্বাচিত জয়িতাদের এখন যারা সমাজে নির্যাতিত হচ্ছে তাদেরকে জয়িতা হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল জননী নারী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় এ বছর রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা থেকে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট দশ জন নারী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। এদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে একজন করে মোট পাঁচজনকে চূড়ান্তভাবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচন করে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচক কমিটি।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে সিরাজগঞ্জের মোছা: সানজিদা আক্তার শিমু, শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে রাজশাহীর ড. হোসনে আরা আরজু, সফল জননী নারী হিসেবে বগুড়ার বুলবুলি রাণী বর্মন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নব উদ্যমী নারী হিসেবে বগুড়ার মোছা. ফৌজিয়া হক বীথি ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাবনার মোছা. কামরুন নাহার শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা গ্রহণ করেন। এর আগে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতার জীবন সংগ্রামের উপর ধারণকৃত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জিয়াউল হক স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্র সভাপতিত্বে বিশিষ্ট সমাজসেবী ও নারীনেত্রী শাহিন আক্তার রেনী, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি টিএম মুজাহিদুল ইসলাম ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সুজায়েত ইসলাম ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বক্তৃতা করেন।