নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বুধবার। রাত ১২:৩০। ১২ নভেম্বর, ২০২৫।

শেখ হাসিনার নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন: রিজভী

নভেম্বর ১১, ২০২৫ ৯:৩৭
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জাতীয়াতবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা ১৪০০ শিশু, কিশোর, তরুণ হত্যা করে এখন ভারত বসে অডিও বার্তা পাঠিয়ে নাশকতা করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনকি একজন পুড়ে মারাও গেছেন। কোনো একটা চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের টাকা তাদের হাতে আছে। সব টাকা আটকানো যায়নি। সেই টাকা খরচ করে তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছেন।

ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয় উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদ যেখানে জন্ম ও বিকাশ লাভ করে, সেখানে কোথাও ন্যূনতম গণতন্ত্রের জায়গা থাকে না। ফ্যাসিবাদের ছোবলে নির্বাচন কমিশন, গণতন্ত্র ও তার প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যখন আক্রান্ত হয় তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আক্রান্ত হয়। শেখ হাসিনা এই ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যাবস্থা কায়েম করেছিল। এ সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিলো না। আমাদের ছাত্রদলের ছেলেরা চায়ের দোকান বা শ্রেণিকক্ষ কোথাও বসতে পারেনি। গত ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলকে এ বিষয়টি ভুগিয়েছে।

জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের আত্ম-পরিচয় নিশ্চিত করেছেন বর্ণনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাহাত্তরের পর থেকেই আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সবাইকে বাঙালি হয়ে যেতে বলেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন আসে আমরা কোন দেশের বাঙালি, আমাদের চাকমা, মারমা কীভাবে বাঙালি হবে। এর পরিবর্তে জিয়াউর রহমান আনলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এর মধ্যে আমার পাহাড়ী, সমতল, নদী সব চলে আসে। আমাদের এই আত্ম-পরিচয়ের সংকট নিরসন করলেন জিয়াউর রহমান। এটাকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুছে দিতে চেয়েছিল, কিন্ত তিনি সেটা পারেননি।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিলো। পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে এসে সবাই তার রাজনীতি করতে পারবেন। তার মত প্রকাশ করতে পারবেন এই স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটাই ৭ নভেম্বরের কৃতিত্ব ও মহত্ব, আপনি এটাকে কখনও অস্বীকার করতে পারবেন না।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলের বর্ণনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের পরেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রসহ সকল খাতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তকে কেউ অস্বীকার করতে পারেনি। জিয়াউর রহমানের সময়ের আগে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের অক্ষর জ্ঞান ছিলো। যেটা তিনি স্বল্প সময়ে সেটিকে ৪০ শতাংশে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার সময়ে তলাবিহীন ঝুড়ির মতো দেশ চাউল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এখনও যা চলছে সেটা তারই এক্সটেনশন। ভালো কিছু করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে করেছেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি আপোষ করেননি বলেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করে সাবেক এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে হবিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে ছাত্রদল গঠন করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় এরশাদের আমলে আমরা মাত্র ১২/১৩ জন মিলে ঝটিকা মিছিল দিয়ে সামরিক আইন ভেঙেছি। এর পরেই ছাত্রদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। ৮০ সালের রাকসু নির্বাচনে আমরা একটি সিটও পাইনি। তবে ৯০ এ এসে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি ও ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে সবগুলো পদে নির্বাচিত হয়েছি।

জ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনাই ছাত্র সংগঠনের কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হলে, যারা শিক্ষার পরিবেশ এবং রাজনীতির চর্চা করতে চায় সে সংগঠন বিকাশ লাভ করে। ছাত্র রাজনীতির মূল কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন তাদেরই সেই দায়িত্ব থাকবে। তারা সে দায়িত্ব পালন না করলে, শিক্ষাবহির্ভূত কার্যক্রম শুরু হবে।

এ সময় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো তাদের সবার পরাজয় হয়েছে ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। আমাদেরকে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন জানতে হবে, তেমনি আমাদের সার্বভৌমত্ব ফেরত পাওয়ার দিন ৭ নভেম্বর সম্পর্কে জানতে হবে।

চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি জিএসদের দেখলাম তাদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য যেন বিগত দিনে ছাত্রলীগের খাতায় নাম থাকতে হবে। ছাত্রদল ন্যায় ও গণতন্ত্রের পথে কোনো সময় আপোষ করেনি। তারা প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এই চার নির্বাচনে হয়ত ছাত্রদল পরাজিত হয়েছে। তবে এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি বিগত ৫ দশকের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমাদের ন্যায়ের লড়াই প্রকাশ্যে চলমান থাকবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী। এ সময় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, ইউট্যাবরে রাবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসনে, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামরে সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমরিুল ইসলাম, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম ও ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডাক্তার আওয়াল প্রমুখ।

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।