নওগাঁ প্রতিনিধি: মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ৯০ডিগ্রি বাঁকে ও মোড়ে পরীক্ষামূলক ভাবে নওগাঁ সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে সড়ক আয়না বা উত্তল দর্পন। উত্তরবঙ্গের মধ্যে এই প্রথম পাহাড়ি অঞ্চলের সড়কের মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে ও মোড়ে মুখোমুখি সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে স্থাপন করা সড়কআয়না পথচারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতেও এই আয়না স্থাপন করে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোকে পথচারীদের জন্য নিরাপদ করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে নওগাঁবাসী।
নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষামূলক ভাবে নওগাঁ সড়ক বিভাগের মান্দা-নিয়ামতপুর-শিবপুর-পোরশা মহাসড়কের ৫৪ কিলোমিটার অংশের সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও মোড় বিশিষ্ট ২৫ কিলোমিটার অংশের মধ্যে দুর্ঘটনা এড়াতে ২০টি উত্তল দর্পন বা সড়কআয়না স্থাপন করা হয়েছে। উন্নতমানের ফাইবারের তৈরি এই আয়নাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে নওগাঁ সড়ক বিভাগ নিজ উদ্যোগে স্থাপন করেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ৯০ ডিগ্রির বাঁকগুলোতে স্থাপন করা আয়নার মাধ্যমে সড়কের উভয় দিক থেকে আসা পথচারীসহ যানবাহনের চালকরা বাঁকের অপর প্রান্ত থেকে কোন যানবাহনসহ পথচারী আসছে তা দেখতে পেয়ে নিরাপদভাবে বাঁকটি অতিক্রম করতে পারছেন। বর্তমানে ওই সড়কের বাঁকগুলো অতিক্রমের সময় আয়না দেখে নিরাপদে চলাচল করছেন সবাই। ফলে দিনে কিংবা রাতে বাঁক পার হতে গিয়ে দেখতে না পেয়ে আর মুখোমুখি সংঘর্ষের মাধ্যমে কোন দুর্ঘটনা ঘটছে না। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে এই সড়ক আয়না স্থাপন করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামের ভ্যান চালক কচ্ছিমদ্দিন মিয়া বলেন, নিয়ামতপুর-শিবপুর সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে ভরা একটি মহাসড়ক। বর্তমানে সড়কটি নতুন করে প্রশস্তকরণসহ পাঁকাকরণ করায় প্রতিটি যানবাহনই তুলনামূলকভাবে দ্রুতগতিতে চলাচল করছে। ফলে সড়কের এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো অতিক্রম করার সময় মনের অজান্তেই অপরপ্রান্ত থেকে আগত যানবাহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতো। কিন্তু বাঁকগুলোতে এই ব্যতিক্রমি আয়না স্থাপন করায় অনেকটাই কমেছে দুর্ঘটনা। আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ সংশ্লিষ্টদের।
মান্দা উপজেলার বাসিন্দা ট্রাকচালক আব্দুল মালেক বলেন, সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে এই আয়না স্থাপন করায় আমরা চালকরা বাঁকগুলো অতিক্রম করার সময় অপরদিক থেকে কোন ধরনের যানবাহন আসলে তা দেখতে পাচ্ছি এবং অপরদিক থেকেও দেখা যাচ্ছে। ফলে উভয়ই নিরাপদে বাঁকগুলো অতিক্রম করতে পারছি। এতে করে বাঁকগুলোতে অনেকটাই কমেছে মারণঘাতি দুর্ঘটনা। তাই সড়কে চলাচল নিরাপদ করতে অন্যান্য সকল ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতেও এই আয়না স্থাপন করার অনুরোধ করছি।
নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (চ:দ:) নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের সড়ক হচ্ছে মান্দা-নিয়ামতপুর-শিবপুর-পোরশা মহাসড়কটি। তাই সড়কটিকে চলাচলের জন্য নিরাপদ করতেই নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক নওগাঁ সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক সড়কের ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে দামী এই সড়কআয়না। ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের মানুষ এই আয়না দেখে বাঁক অতিক্রম করতে অভ্যস্ত হয়েছেন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমেছে। আমি আশাবাদি আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই সড়কটি সকলের জন্য নিরাপদ সড়কে পরিণত হবে।
নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক রাসেল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকার টেকসই ও নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণ করতে আয়না স্থাপনের এমন পরীক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করছে নওগাঁ সড়ক বিভাগ। তারই অংশ হিসেবে জনগুরুত্বপূর্ণ মান্দা-নিয়ামতপুর-শিবপুর-পোরশা মহাসড়কটির দুর্ঘটনা প্রবণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে উন্নতমানের ফাইবার দিয়ে তৈরি এই আয়না স্থাপন করা হয়েছে।
যে আয়নাগুলো রোদে নষ্ট হওয়া কিংবা ঢিলে ফেটে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই স্থানীয়রাসহ সড়কে চলাচলকারীরা আয়নাটির প্রতি যত্নশীল হলে আয়নাগুলো বহুবছর ব্যবহার করা সম্ভব। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার সকল মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতেও এই সড়ক আয়না স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।