নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শুক্রবার। বিকাল ৩:০৬। ৯ মে, ২০২৫।

আসামির সোয়া লাখ টাকা গায়েব,কিছু না দেখা সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে চাপ দিচ্ছে পুলিশ!

এপ্রিল ৯, ২০২৩ ৪:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার: দুপুরের খাবার খেতে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন কালাম শেখ। বাড়ির গলিতেই পুলিশ তাকে ধরে কাগজে সই নেন। পরে কালাম জানতে পারেন, তিনি একটি মাদক মামলার সাক্ষী। কালামকে যে মামলায় সাক্ষী করা হয় সে মামলার আসামির স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ বাড়ি থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করলেও জব্দ তালিকায় মাত্র ১৩ হাজার ৪০ টাকা দেখানো হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, পুলিশ বাড়ি থেকে জব্দ করা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৬০ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়েছে। এখন পুলিশ কালাম শেখকে চাপ দিচ্ছে যেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে গিয়ে তিনি বলেন যে, অভিযানের সময় ১৩ হাজার ৪০ টাকাই জব্দ করা হয়েছিল। এ মামলার আরেক সাক্ষীকেও একই ধরনের চাপ দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) রাজপাড়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।

গত ৯ মার্চ দুপুরে রাজপাড়া থানা পুলিশের একটি দল শহরের বহরমপুর এলাকার মো. সেন্টুর বাড়িতে এ অভিযান চালিয়েছিল। সেন্টু একজন মাদকসেবী। পুলিশ সেন্টুর সঙ্গে তার স্ত্রী মিতা পারভীনকেও গ্রেপ্তার করে। পরে ৩০ গ্রাম হেরোইন ও ১০ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার দেখিয়ে পুলিশ একটি মামলা করে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, পুলিশ বাড়ি থেকে জব্দ করা টাকা আত্মসাৎ করে।

সেন্টুর স্বজনদের দাবি, মিতা একটি বেসরকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির কাজ করছিলেন। বাড়িতে তার ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিল। পুলিশ এই টাকাও জব্দ করেছিল। কিন্তু মামলার জব্দ তালিকায় মাত্র ১৩ হাজার ৪০ টাকা দেখানো হয়। বাকি টাকা অভিযানে অংশ নেওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল জলিল এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মজনু মিয়া আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের। এ অভিযোগের তদন্ত করছে আরএমপি। পুলিশের একজন সহকারী কমিশনারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মামলার সাক্ষী সেন্টুর প্রতিবেশী কালাম শেখ বলেন, সেদিন দুপুরে তিনি দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। বাড়ির গলিতে ঢোকার সময় একজন পুলিশ তার কাছ থেকে সই নেন। এরপর তিনি বাড়িতে ঢুকে যখন ভাত খাচ্ছিলেন তখন ওই পুলিশ সদস্য আবার এসে মোবাইল নম্বর নিয়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন যে, তিনি সেন্টুর বাড়িতে অভিযানের মামলার সাক্ষী।

কালাম শেখ বলেন, তিনি সেদিন সেন্টুর বাড়ি যাননি। বাড়ি থেকে পুলিশ কি কি নিয়ে গেছে তার কিছুই দেখেননি। এখন পুলিশ শিখিয়ে দিচ্ছে, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে গিয়ে তিনি যেন বলেন বাড়ি থেকে মাদকদ্রব্যের পাশাপাশি ১৩ হাজার ৪০ টাকা জব্দ করা হয়েছিল।

এই মামলার আরেক সাক্ষী মো. তুষার। পেশায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক। অভিযানের দিন সেন্টুর বাড়িতেই কাজ করছিলেন তিনি। তুষার বলেন, কয়েকদিন ধরে থানা থেকে তাকে বার বার ফোন করা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ডাকা হচ্ছে। তাকেও শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেন তিনি গিয়ে বলেন বাড়ি থেকে ১৩ হাজার ৪০ টাকা জব্দ করা হয়েছিল। তুষার জানান, টাকা কিংবা মাদক জব্দ করার পর তাকে দেখানো হয়নি। এখন পুলিশের কথা না শুনলে ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এ নিয়ে আতঙ্কে থাকার কথাও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইলে কোন মন্তব্য করতে চাননি অভিযানে অংশ নেওয়া এএসআই মজনু মিয়া। আর এসআই আবদুল জলিল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্বাক্ষীদের সামনে জব্দ তালিকা করা হয়েছিল। সাক্ষীরা সবই দেখেছে। এসব অভিযোগ করে লাভ নেই।

অভিযানের কিছু না দেখলেও মামলায় সাক্ষী করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, এ ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নেই। এসব নিয়ে যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে তিনি অভিযোগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তদন্ত করে দেখা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।