ঢাকা সকাল ১০:১১। বুধবার ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।
  1. অপরাধ
  2. আইন আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আবহাওয়া
  5. আরো
  6. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  7. কবিতা
  8. কলাম
  9. কোভিড-১৯
  10. খুলনা
  11. খেলা
  12. চট্টগ্রাম
  13. চাকুরী
  14. চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  15. জয়পুরহাট
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রোজা : কী খাবেন, কী খাবেন না

subadmin
মার্চ ১৫, ২০২৫ ১০:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চলছে সংযমের মাস মাহে রমজান। রমজান মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা খুবই জরুরি। কারণ রমজানে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তাই এই মাসে কী খেতে হয়, কী খাওয়া উচিত নয়, তার দিকে নজর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশে রমজান মাস এলেই খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে যায়। রোজায় প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে আসে ভিন্নতা, তার সঙ্গে সময়ের ব্যবধান তো রয়েছেই। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের অনেকেরই মনে হতে পারে, রোজায় ১৪-১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। তাই ইফতারে বেশি বেশি খাওয়া ভালো। রোজায় খাবারের বিরতি কম হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়ে যায়। আবার অনেকেই বলেন, রোজায় খাবারের হিসাব নেই।

রোজা পালনের জন্য প্রয়োজন সঠিক ডায়েট নির্বাচন, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক শক্তি এবং অদম্য ইচ্ছা ও আনুগত্য। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, কিছু নিয়মনীতি ও পরামর্শ অনুসরণ করলে কষ্ট ছাড়াই রোজা পালন করা যায়। বিভিন্ন দেশে ও সংস্কৃতি ভেদে রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, অস্বাস্থ্যকর ইফতার ও সেহরি নানা রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। দিনভর রোজা রেখে শরীরে যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে, তা পূরণে সেহরি ও ইফতারের এমন খাবার খেতে হবে যেগুলোতে পর্যাপ্ত প্রোটিন, কার্বোহাইডেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ থাকে।

কী খাবেন ইফতারে
বেশির ভাগ রোজাদারের ইফতারে তেলে ভাজা ও গুরুপাক খাবারের আয়োজন থাকে। রমজান মাস এলে বিকাল থেকেই ইফতারের জন্য নানা খাবার তৈরি ও বিক্রির হিড়িক পড়ে। হরেক রকম ইফতারির পসরা সাজিয়ে দোকানিরা রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, অলিগলিতে, হাটবাজারে সাজিয়ে রাখেন। এসব ইফতারির মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, ডালবড়া, সবজিবড়া, আলুর চপ, খেজুর, হালিম, জালি কাবাব, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি। আরো রয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, নানা রং মিশ্রিত বাহারি শরবত। তাছাড়া মুখরোচক বিরিয়ানি ও তেহারি তো আছেই।

প্রশ্ন হলো, এসব মুখরোচক খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কি না। যে তেলে ভাজা হয়, সেই তেল একবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ একই তেল বারবার আগুনে ফোটানো হলে কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হয়, যেমন পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন, যার মধ্যে বেনজা পাইরিন নামে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে এমন পদার্থের মাত্রা বেশি থাকে। তাছাড়া অপরিষ্কারভাবে ইফতারি তৈরি করলে পেটের পীড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য যত্রতত্র খোলা খাবার না খাওয়াই উচিত। খুব কম ফলই পাওয়া যাবে, যা ভেজালমুক্ত। শরবতের কথা তো বলাইবাহুল্য। রাস্তাঘাটে, হাটবাজারে রকমারি শরবত তৈরি করা হয়। আমাদের জানতে হবে, এসব শরবত যে পানি দিয়ে বানানো হয়, সে পানি বিশুদ্ধ কি না। তাছাড়া ইফতারের জন্য তৈরি প্রায় সব খাবার তেলও উচ্চ চর্বিযুক্ত।

একজন রোজাদার ইফতারে কী খাবেন, তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর। পারতপক্ষে দোকানের তৈরি ইফতার ও সেহরিসামগ্রী না খাওয়াই ভালো। সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারে খেজুর বা খোরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, পেঁয়াজু, বুট, মৌসুমি ফল থাকা ভালো। ফলমূল খেলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়। রুচি অনুযায়ী বাসার রান্না করা নুডলসও খেতে পারেন। বেশি ভাজা-ভুনা, তেহারি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে বদহজম হতে পারে। রুচি পরিবর্তনের জন্য দুই-একটি জিলাপি খেতে পারেন। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন রমজানে পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। এশা ও তারাবির নামাজের পর অভ্যাস অনুযায়ী পরিমাণমতো ভাত, মাছ অথবা মুরগির মাংস, ডাল ও সবজি খাবেন। ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও পানিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।

কী খাবেন সেহরিতে
রোজার প্রধান খাবারই হচ্ছে সেহরি। সারা দিন অনাহারে থেকে রোজা পালন করতে হয় সেহরি খেয়েই। সেহরিতে সুষম পুষ্টিকর খাবার না হলে রোজা রাখা কষ্টদায়ক হতে পারে। ইফতারের মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো সেহরির খাবার, তবে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। রমজানে স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন করে সুবহে সাদিকের আগে ঘুম থেকে ওঠে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে হয়। সকালের নাশতার পরিবর্তে খুব ভোরে সারা দিনের উপবাসের সময় চলার মতো খাবারের প্রয়োজন হয়। শরীরটাকে সুস্থ রাখার জন্য সেহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, সেহরির খাবার মুখরোচক, সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন। অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়।

ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে, তাই সেহরির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি বেশি খাবার খেতে হবে, তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, চার-পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো, বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির শঙ্কাই বেশি।

পিপাসা নিবারণ হয়, সেই পরিমাণ পানি নিজের অভ্যাস অনুযায়ী পান করতে হবে। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং পানিশূন্যতার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করবেন। অনেকে পানির পরিবর্তে লেমন অথবা রোজ ওয়াটার, ফ্রুট ওয়াটার, নানা ধরনের শরবত, ভিটামিন ওয়াটারসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করেন। এগুলো পরিহার করা ভালো। রোজাদারদের শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করাই ভালো। প্রচুর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল আহার করা উচিত।

রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে এক জন ব্যক্তি সহজেই তার স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে পারেন, যদি ঠিক ডায়েট অনুসরণ করা হয়। কিছু টিপস মনে রাখুন :

(১) অতিভোজন থেকেও বিরত থাকুন। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খান, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে।

(২) কখনোই শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না। অনেকেই সেহরিতে কিছু না খেয়েই রোজা রাখেন, তা ঠিক নয়।

(৩) ইফতার ও সেহরির সময়ের মধ্যে অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। গ্লাস গুনে পানি খেতে অসুবিধা হলে সমপরিমাণ পানি বোতলে ভরে রাখুন।

(৪) ইফতারে বেশি ক্যালরিসমৃদ্ধ এবং সহজে ও তাড়াতাড়ি হজম হয়, এমন খাদ্য গ্রহণ করুন। সেহরিতেও সহজপাচ্য খাবার খান।

(৫) ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাদ্য বুক জ্বালাপোড়া এবং বদহজমের সমস্যা তৈরি করে, তাই এগুলো বর্জন করুন।

(৬) রান্নার সময় ডালডার পরিবর্তে সয়াবিন তেল ব্যবহার করুন, তবে যতটা সম্ভব পরিমাণ কম করে ব্যবহার করুন।

(৭) অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, কারণ এসব রোজার সময় পানির পিপাসা বৃদ্ধি করে।

(৮) যাদের চা, কফি, সিগারেট, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি ব্যবহারের আসক্তি আছে, তারা এগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। হঠাত্ এগুলো ছেড়ে দিলে মাথাব্যথা, রাগ, মেজাজ খিটখিটে ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

(৯) ঘুমানোর আগে ও সেহরির পরে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না।

(১০) রোজা রাখা অবস্থায় সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের পর ব্যায়াম করা উচিত।

(১১) দিনে গরমের সময়ে ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা উচিত। সম্ভব হলে শারীরিক পরিশ্রম কম করুন।

মনে রাখবেন, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণেই অসুস্থতা দেখা দিয়ে থাকে। ১১ মাস পর এ সময়ে রোজাদারদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় হঠাত্ বেশ পরিবর্তন আসে। তাই যারা নিয়মিত রোজা রাখেন, তাদের খাদ্য গ্রহণ ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

লেখক : ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সিনিয়র চিকিৎসক
-(ইত্তেফাক)

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
ঢাকা অফিসঃ ১৬৭/১২ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা- ১০০০ আঞ্চলিক অফিস : উত্তর তেমুহনী সদর, লক্ষ্মীপুর ৩৭০০