নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শনিবার। রাত ১০:১৪। ১০ মে, ২০২৫।

ভারত-পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে কি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে, তাদের ডকট্রিন কী বলে

মে ১০, ২০২৫ ১:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।

আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।

উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে…পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।

নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।

কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।

পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।

ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?

ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।

ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?

প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।

নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।

পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:

প্রথম আঘাত নয় (No First Use-NFU) : এই নীতির অর্থ হলো ভারত শত্রুর ওপর প্রথম পারমাণবিক হামলা চালাবে না। পারমাণবিক হামলার শিকার হলে তবেই তারা পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে। ভারতের নীতি অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা হলে বা বিদেশি ভূখণ্ডে তাদের সেনাদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে তারা প্রতিশোধ নিতে পারে। ভারত পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্য ন্যূনতম প্রতিরোধ (Credible Minimum Deterrence) : ভারতের অবস্থান মূলত প্রতিরোধের ওপর কেন্দ্রীভূত। অর্থাৎ, অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকে পারমাণবিক হামলার হুমকি মোকাবিলায় তারা পারমাণবিক অস্ত্রাগার গড়ে তুলেছে। ভারতের দাবি, তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে একটি বিমাস্বরূপ। তবে নয়াদিল্লি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী নয়। তারা বলে, সমস্ত দেশ একই সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণ না করা পর্যন্ত তারা তা করবে না।

ব্যাপক প্রতিশোধ (Massive Retaliation) : কোনো আগ্রাসী দেশ প্রথম আঘাত হানলে ভারত এমনভাবে প্রতিশোধ নেবে, যাতে শত্রুর সামরিক সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়।
জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্রের বিকল্প: ডকট্রিন অনুযায়ী, ভারত সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যারা জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে দেশ বা বিদেশে তাদের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।

পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?

কৌশলগত অস্পষ্টতা: পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত কোনো ব্যাপক নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। এর ফলে তারা অতীতের মতো ভবিষ্যতে কোনো সংঘাতের যেকোনো পর্যায়ে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করার বিষয়ে নীতিগত নমনীয়তা রাখে বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুরু থেকেই ইসলামাবাদের এই অস্বচ্ছতা কৌশলগত ছিল। ধারণা করা হয়, ভারতের উন্নত সামরিক শক্তির পাশাপাশি পারমাণবিক শক্তিকেও প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে এই নীতি তৈরি করেছে পাকিস্তান।
চারটি ট্রিগার: অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ আহমেদ কিদওয়াই। তিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির সঙ্গে জড়িত একজন গুরুত্বপূর্ণ কৌশলবিদ এবং পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার একজন উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত। ২০০১ সালে তিনি চারটি বিস্তৃত ‘রেড লাইন’ বা ট্রিগার নির্ধারণ করেছিলেন। এসব পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো:

স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।

সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।

অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।

তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।

ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?

যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।

২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।

রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’

ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’

পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?

পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।

পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।

২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।