নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শুক্রবার। রাত ১১:৫৮। ২০ জুন, ২০২৫।

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান চেষ্টায় বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

জুন ২০, ২০২৫ ৩:৪৬
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানে আশা নিয়ে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন, ঠিক এমন এক সময় যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

গত সপ্তাহে ইসরাইল দাবি করে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। এরপরই তারা তেহরানের ওপর বিমান হামলা চালায়। ইরানের পাল্টা হামলার মাধ্যমে এটি প্রাণঘাতী সংঘাতে রূপ নেয়।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইসরাইলের একটি হাসপাতালে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে বলেন, ‘এর জন্য ইরানকে বড় মাশুল দিতে হবে।’ তবে তেহরান দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল একটি সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি।

জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, এই উত্তেজনার মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করবেন। বৈঠকে মূলত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরেই আলোচনা হবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘পরবর্তী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য কূটনৈতিক সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।’

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-র সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয় যে, ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না।’

আরও পড়ুনঃ  বিচার বিভাগের ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করছে ইউএনডিপি

নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জোটভুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে রাশিয়া, ইরানের মিত্র, হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে—যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ হবে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ’।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও এ বিষয়ে শুক্রবার দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক ডাকা হয়েছে, যা ইরান আহ্বান করেছে এবং রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের সমর্থন পেয়েছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ সরোকা হাসপাতালে হামলার পর বলেন, ‘আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীকে আর বেঁচে থাকতে দেওয়া যায় না।’

সরোকা হাসপাতালের পরিচালক শ্লোমি কোদিশ জানান, ইরানের হামলায় ৪০ জন আহত হয়েছেন এবং হাসপাতালের একাধিক বিভাগ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ ওয়াসিম হিন বলেন, ‘এখানে কেবল চিকিৎসক ও রোগীরা ছিলেন, তবুও আমাদের এই পরিণতি!’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এই ধরনের হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে অভিহিত করেন, এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেন, ‘নাগরিকদের ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’

ইসরাইলি হামলা থেকে বাঁচতে ইরান থেকে মানুষ পালাচ্ছে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ হাসান, যিনি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন, বলেন, ‘ওই দিনরাত ছিল বিভীষিকাময়। সাইরেনের শব্দ, কান্না, ক্ষেপণাস্ত্রের আতঙ্ক—সব মিলিয়ে ভয়ানক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫০ বছর বয়সী একজন ইরানি ফার্মাসিস্ট তুরস্ক সীমান্তে বলেন, ‘মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ  তথ্য এখন জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত অস্ত্র: পরিবেশ উপদেষ্টা

ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইরানে জাতীয় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের বিক্ষোভের পর সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকআউট।

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলের অভিযানে যুক্ত হয়, তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র, যেটি ভূপৃষ্ঠের নিচে তৈরি। এটি ধ্বংসে বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা ব্যবহার করা হতে পারে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ট্রাম্প আক্রমণের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন, তবে এখনো অপেক্ষা করছেন—ইরান পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসে কি না।

ট্রাম্প আগে রাজনৈতিক সমাধানকে প্রাধান্য দিয়ে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির বিকল্প একটি সমঝোতা চেয়েছিলেন, যেটি তিনি নিজেই প্রথম মেয়াদে বাতিল করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে বেশ কিছু যুদ্ধবিমান আর দেখা যায়নি, উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে—সম্ভবত ইরানি হামলা থেকে বাঁচতে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট দাবি করেছেন, ‘ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।’

ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তির ৩.৬৭ শতাংশ সীমার অনেক বেশি, তবে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কম।

আরও পড়ুনঃ  একদিনে আরো ২৩৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত

ইসরাইল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কখনও কিছু বলেনি, তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, ইসরাইলের কাছে ৯০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে।

ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার ‘মূর্খ’ প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, তবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’

বৃহস্পতিবার ইসরাইল দাবি করে, তারা রাতভর ইরানের ডজনখানেক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ছিল আরাক পারমাণবিক চুল্লি (নিষ্ক্রিয়) ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানান, আরাক চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং ইসরাইলের এই আচরণকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে দাবি করেন।

ইরানি গণমাধ্যম জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে তেহরানে বিস্ফোরণ ঘটে, এবং রেভল্যুশনারি গার্ডস জানায়, তারা একশটির বেশি ‘আত্মঘাতী ও যুদ্ধ ড্রোন’ ইসরায়েলে ছুড়েছে।

ইসরাইলের বাত ইয়াম শহরে রোববারের এক হামলার জায়গা থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এর ফলে ১৩ জুন থেকে ইরানে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরাইলে মোট ২৫ জন নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে ইরান দাবি করেছে, ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন, সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিক।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।