নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা সোমবার। রাত ১২:১৩। ২৩ জুন, ২০২৫।

ইরানে মার্কিন হামলা : আমরা যা জানি

জুন ২২, ২০২৫ ২:৩৯
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার এই হামলাকে ‘অত্যন্ত সফল’ উল্লেখ করে জানিয়েছেন, সব মার্কিন বিমান নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে। খবর এএফপি’র।

ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানের সঙ্গে নতুন পারমাণবিক চুক্তির কূটনৈতিক পথ খুঁজছিলেন, যা তিনি ২০১৮ সালে বাতিল করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে টার্গেট করে ইসরাইল যে অভিযান শুরু করেছে, তার পক্ষে অবস্থান নেন। ওই অভিযান শুরু হয়েছে এক সপ্তাহেরও কিছু আগে।

এএফপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছে।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে হামলা চালিয়েছে। এরমধ্যে ফোর্দোতে ‘পূর্ণ শক্তির বোমা হামলা’ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করে ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে নির্মিত ফোর্দো ছিল একটি পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, যেখানে প্রায় তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনের ক্ষমতা ছিল। সেন্ট্রিফিউজ হলো এমন এক যন্ত্র যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয়। যা সামরিক ও বেসামরিক উভয় কাজেই লাগে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হলো চণ্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ক্যাম্পেইন

মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত হওয়ায় ফোর্দোতে হামলা চালানো ইসরাইলি বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, কারণ তাদের কাছে এই ধরনের গভীরে আঘাত হানার মতো শক্তিশালী বোমা নেই।

অপরদিকে, নাতাঞ্জে ছিল ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেখানে ধাপে ধাপে বসানো প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজ ছিল, যেগুলো দিয়ে ইউরেনিয়াম শক্তিশালী করা হতো। আর ইস্পাহানে ছিল একটি ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র ও একটি পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন কারখানা।

ট্রাম্প হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের ধরন উল্লেখ করেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ফোর্দোতে ৩০ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ১৩ হাজার ৬শ’ কেজি ওজনের, জিবিইউ-৫৭ নামের একটি শক্তিশালী আমেরিকান ‘বাঙ্কার-বাস্টিং’ বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জিবিইউ-৫৭, যা ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ নামেও পরিচিত, যাকে মাটির প্রায় ২০০ ফুট বা ৬০ মিটার গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরিত হওয়ার জন্য বানানো হয়েছে।

এই বোমাটা অন্য সব বোমার থেকে আলাদা। সাধারণত, অন্য ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমাগুলো যেখানে আঘাত করে, সেখানেই ফেটে যায় অথবা আঘাত করার ঠিক পরপরই বিস্ফোরিত হয়। কিন্তু এই বোমাটা মাটির গভীরে ঢুকে তারপর ফাটে।

আরও পড়ুনঃ  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিবাদ

এই বোমাটির পরীক্ষা শুরু হয় ২০০৪ সালে, আর ২০০৯ সালে মার্কিন বিমান ও মহাকাশ প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং-এর ওপর জিবিইউ-৫৭ কে যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

‘আমেরিকান বি-২ স্পিরিট’ একমাত্র বিমান যা জিবিইউ-৫৭ কে বহন করতে পারে। এটি একটি শত্রুর রাডার ফাঁকি দিতে পারা দূরপাল্লার বোমারু বিমান। যা দুটি জিবিইউ-৫৭ একসঙ্গে বহন করতে পারে।

ইরানে হামলার আগে, বিমানের গতিবিধি নজরে রাখা ওয়েবসাইট ও মার্কিন মিডিয়াগুলো জানিয়েছিল যে, বেশ কয়েকটি বি-২ বোমারু বিমান আমেরিকার মাঝখানে থাকা মিসৌরির একটি ঘাঁটি থেকে উড়ে গেছে।

এই বোমারু বিমানগুলোতে একবার তেল ভর্তি করলে ৬ হাজার নটিক্যাল মাইল বা ৯ হাজার ৬শ’ কিলোমিটার উড়তে পারে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে যাতে শত্রুর সবচেয়ে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কড়া পাহারায় থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  নওগাঁয় অটোরিকশা-ভটভটির সংঘর্ষে নিহত ২

বি-২ বোমারু বিমানটি প্রথমবার সবার সামনে আনা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। এরপরের বছরই এটি প্রথমবার আকাশে উড়ে। আর এই বিমানের প্রথমটি সরবরাহ করা হয় ১৯৯৩ সালে।

এই বোমারু বিমানটি ১৯৯০-এর দশকে সার্বিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিয়েছিল। তখন এটি মিসৌরি থেকে কসোভো পর্যন্ত একটানা উড়ে আবার ফিরে এসেছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ২০০০-এর দশকে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধেও এই বি-২ বিমানগুলো ব্যবহার করে।

ট্রাম্প ইরানকে বলেছে, ‘এই যুদ্ধ শেষ করতে রাজি হও।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘এখন শান্তির সময়।’

তবে, এই হামলার পর তেহরান কি সংঘাত কমিয়ে আনবে, নাকি আরও বাড়িয়ে দেবে, তা এখনও দেখার বাকি।

যদি ইরান দ্বিতীয় পথটি বেছে নেয়, তবে তারা মধ্যপ্রাচ্যে থাকা আমেরিকান সেনাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। অথবা, তারা কৌশলগত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারে, যা দিয়ে বিশ্বের মোট তেলের পাঁচ ভাগের একভাগ পরিবহণ করা হয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।