নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা সোমবার। সকাল ১১:০৮। ২৩ জুন, ২০২৫।

ইরানে পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমা

জুন ২৩, ২০২৫ ৩:৫০
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্র। গত শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে হবে। নয়তো আরও হামলার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

এই হামলার পর খোদ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি ইরানকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে মার্কিন হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। আর মার্কিন হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া বিশ্বের জ্বালানি পরিবহনের অন্যতম জলপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান।

১২ জুন রাতে হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর জবাব পরদিন থেকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরান।

এর পর থেকে দুই দেশের সামরিক স্থাপনাসহ বেসামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে দুই পক্ষই। এই সংঘাতে ইরানে এ পর্যন্ত ৬০০-র বেশি নিহত এবং ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার রাতে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় রাতে এর বিস্তারিত তুলে ধরে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইরানে চালানো এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। এতে ১২৫টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়। অভিযানে ‘ডিকয়’ (দিগ্ভ্রান্ত করার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র ও যান) হিসেবে ব্যবহার করা হয় বেশ কয়েকটি বি-২ বোমারু বিমানও। এ ছাড়া কয়েকটি বি-টু বিমান হামলা চালায় ইরানের ফোরদো ও নাতাঞ্জ স্থাপনায়। হামলায় বাংকার বাস্টার খ্যাত ‘জিবিইউ-৫৭’ বোমা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হলো চণ্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ক্যাম্পেইন

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পেন্টাগন জানিয়েছে, বি-২ বিমান ব্যবহার করে ১৮ ঘণ্টা ধরে চলেছে এই অভিযান। অভিযানে ৭৫টি দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ছিল বাংকার বাস্টার। হামলার পর ফোরদো ছয়বার বিস্ফোরিত হয়েছে।

যা বললেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু

ইরানে অভিযান শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আজ রাতে আমি বলতে পারি, এই হামলাগুলো ছিল এক অসাধারণ সামরিক সাফল্য। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের উৎপীড়ক ইরানকে এখন শান্তি স্থাপন করতে হবে।’ তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যদি ইরান শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে না হাঁটে, তবে এরপরের হামলা হবে আরও বড়।

হামলার পর ট্রাম্পের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, অসাধারণ এবং ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাস বদলে দেবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কাজ করেছে, যা অন্য কোনো দেশ করতে পারবে না।

তবে এমন হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারাই ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করছেন। বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক সিনেটর টিম কেইন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর বিরুদ্ধে। আরেক সিনেটর অ্যাডাম শিফ বলেন, এই হামলা অসাংবিধানিক। এ ছাড়া গতকাল হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।

‘জবাব দেবে ইরান’

ইরানে হামলার প্রতিবাদে তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে গতকাল ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। তেহরানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, এসব বিক্ষোভ থেকে মার্কিন মুলুকের নিপাত যাওয়ার স্লোগান উঠেছে।

তবে গতকাল মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই, ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে নয়।’ এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেন, তাঁরা এবার সরাসরি ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় নির্বাচনের তারিখ যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে: সিইসি

তবে এই আলোচনার কথা খারিজ করেছে ইরান। হামলার জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজের খবরে বলা হয়েছে, আরাঘচি বলেন, এই হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার ইরানের আছে। এমন হামলার পর আর কোনো কূটনীতির পথ খোলা থাকল কি না, তাঁর জানা নেই।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা প্রসঙ্গে আরাঘচি বলেন, ‘পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে তারা সীমা অতিক্রম করেছে। আমাদের নিজেদের রক্ষার যে অধিকার রয়েছে, তার ভিত্তিতেই এর জবাব দিতে হবে।’

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর দেশটির কোনো স্থাপনায় হামলা না চালালেও ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান দুই দফায় মোট ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রথম দফায় ২২টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। হামলা হয়েছে ইসরায়েলের তেল আবিব, হাইফা, রামাত আবিব শহর, বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে সামরিক ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র। এসব হামলায় ইসরায়েলে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র ‘খোররামশহর-৪’ ব্যবহার করেছে ইরান।

ইরানের এমন হামলার জবাবে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, তারা পশ্চিম ইরানের ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তু’ লক্ষ্য করে আরও হামলা চালাচ্ছে। এ ছাড়া ইমাম হোসাইন স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল কমান্ড সেন্টারে হামলার দাবি করেছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় অন্তত ৯ জন ইরানি নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  বিচার বিভাগের ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করছে ইউএনডিপি

হামলার শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রে

ইরানে হামলার আগে থেকেই নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর এই কাজে আরও গতি এসেছে। হামলার আশঙ্কা লেবানন, ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আরবের বিভিন্ন দেশ থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে মার্কিন সরকার।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপনায় ও নাগরিকদের ওপর ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, ইরান তাদের স্লিপার সেল কাজে লাগাতে পারে। এসব সেল যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপে ব্যবহার করা হতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন বিশ্লেষক ডেভিড স্যানগারও। সিএনএনকে তিনি বলেন, ইরান সাইবার হামলা চালাতে পারে। প্রতিশোধমূলক হামলার শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সাইবার হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরও।

কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের ঘোষণার পর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। মার্কিন হামলার পর এ নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ায় যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। এদিকে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ নিয়ে গতকাল যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মর্জ। তাঁরা বলেছেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যুতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ইরানকে আহ্বান জানাচ্ছি। সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবদান রাখতে প্রস্তুত।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।