সাইদ সাজু, তানোর : রাজশাহীর তানোরে ফসলী জমিতে পুকুর খনন ও বিভিন্ন কলকারখানাসহ স্থাপনা গড়ে তোলায় প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে ফসলী জমি ও ধানের উৎপাদন। ফলে, প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে ফসলী জমি লীজের মুল্য ও ধানের দাম। কৃষকরা বলছেন, ফসলী জমি কমে যাওয়ায় কমেছে খাদ্য উৎপাদন এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে ধানের দাম । এ অবস্থায় চলতে থাকলে খাদ্য ঘাড়তির আশংকায় ফসলী জমিতে পুকুর খনন ও স্থাপনা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকসহ সচেতন মহল।
তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির সিলিমপুর ও হাড়দহ বিল নামে পরিচিত পুরো বিল জুড়ে এক সময় ধান চাস করা হত। যা এখন শুধুই অতীত স্নৃতি। গত কয়েক বছরে সেই ফসলের বুকচিরে খনন করা হয়েছে শত শত অবৈধ পুকুর। এসব পুকুর বন্ধে স্থানীয় কৃষকরা একাধিকবার প্রশাসনসহ উচ্চ পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোন সুফল পায়নি। ওই এলাকার কৃষকরা বলছেন, বিলের ওই জমিতে বছরে একটা ফসল হওয়ায় তেমন লাভ হতনা। ভূমিদস্যুরা কৃষকদের লোভ দেখিয়ে ওই সব ফসলী জমি লীজ নিয়ে পুকুর খনন করেছেন।।
এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর আগেও প্রতি বছরের জন্য ১ বিঘা জমি লীজের মুল্য ছিলো ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি বিঘা জমি ১ বছরের জন্য লীজের মুল্য বেড়ে দাড়িয়েছে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাও আবার অহরহ পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা বলছেন, নিচু জমি গুলোতে পুকুর খনন, উচু ও রাস্তার ধারের ফসলী জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে কলকারখানা ও ঘর বাড়ি নির্মানের কারনে ফসলী জমি কমে যাওয়ায় ফসলী জমির গুরুত্ব ও লীজের মুল্যে বেড়ে যাচ্ছে।
উইকি পিডিয়ার তথ্যমতে তানোরে উপজেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৬শ’ ৬৫ হেক্টর এবং চাষযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ২১ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর। বর্তমানে আলু ও রোপা আমন ধান চাষ হচ্ছে ১৩ হাজার ৩শ’ ৭৫ হেক্টর জমিতে। কমে যাওয়া ফসলী জমি গুলোতে খনন করা হয়েছে পুকুর, আমসহ পেয়ারা বাগান, কলকারখানা, ও ঘরবাড়ি নির্মানও করা হয়েছে। তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব চাইতে বেশী পুকুর খনন করা হয়েছে চান্দুড়িয়া ইউপি এলাকায় এবং আমসহ পেযারা বাগান করা হয়েছে বেশী বাধাইড় ইউপি এলাকায়।
তানোর ও মুন্ডমালা পৌর এলাকাসহ কলমা ইউপি, বাধাইড় ইউপি, পাচন্দর ইউপি, সরনজাই ইউপি, তালন্দ ইউপি, কামারগাঁ ইউপিসহ চান্দুড়িয়া ইউপির বিভিন্ন এলাকার ফসলী জমিতে তৈরি পুকুর খননের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে পোলট্রি ফিড তৈরির কারখানা, কোল্ড স্টোর, ইট ভাটা, আম ও পেয়ারা বাগানসহ ঘর বাড়ি তৈরি করায় কমেছে ফসলী জমি। ফসলী জমি কমে যাওয়ার কারনে জমি লীজের মুল্য বৃদ্ধি পেছেছে। ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রতি বছরই প্রতি মনে ধানের দাম বাড়ছে ২শ’ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত।