নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বৃহস্পতিবার। রাত ১২:৪১। ৩১ জুলাই, ২০২৫।

শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন ৭০টি বাড়ি

জুলাই ২৯, ২০২৫ ৫:১৯
Link Copied!

শিবগঞ্জ প্রতিনিধি : শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হলো ৭০ বাড়ি. সহস্রাধিক বিঘা জমি, আমবাগান, বাঁশবাগান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও গোরস্তান। অসহায় পরিবারগুলো আর্থিক সংকটের কারণে খোলা আকাশের নীচে বাস করছে। তাদের পেটে নেই খাবার,পরণে নেই ভাল পোশাক।

সরেজমিনে দূর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের অসহায় পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে ভয়াবহ চিত্র পাওযা গেছে। দূর্লভপুর ইউনিয়নের ঝালপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল খালেক জানান, গত ২০ দিনে আমাদের গ্রামের ১৪টি বাড়ি, একটি মসজিদ ও প্রায় চারশো বিঘা ফসলি জমি এবং গত তিন বছরে প্রায় ৬০ টি বাড়ি ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এক হাজার বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। প-িতপাড়ার তোহরুল ইসলাম জানান, আমরা পাঁচ ভাইসহ মোট ১০টি পরিবার নদীর তীর ঘেষে খোলা আকাশের নীচে বাস করছি। যে কোন মূহূর্তে বাড়ি-ঘর ধসে নদীতে বিলীন হতে পারে। কিন্তু কোন উপায় নেই কোথাও যাবার।

তিনি আরো জানান, এ বছরে শুধু পন্ডিতপাড়ার প্রায় ১৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। গত চার বছরে এ গ্রামে ৬০টি বাড়ি, প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি, একটি জামে মসজিদ সহ আমবাগানসহ সব কিছু বিলীন হয়ে গেছে। বাদশাহপাড়ার বাবুল উদ্দিন জানান, এবার দিয়ে চারবার ভাঙনের কবলে পড়লাম। প্রথমে চর হাসানপুর গ্রামে বাড়ি ছিল্। ৩০ বিঘা জমি ছিল, আমবাগান ছিল, গরু ছাগল ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব।

আরও পড়ুনঃ  শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন ৭০টি বাড়ি

তিনি বলেন, এবছর শুধু বাদশাহপাড়ার ১৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত চার বছরে এ গ্রামে প্রায় ৩০০টি বাড়ি, দুইটা জামে মসজিদ, দুইটা প্রাইমারী স্কুল, দুইটি ওয়াক্তিয়া মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

৮০ বছরের সোহবার হোসেন জানান, এবার দিয়ে পাঁচবার ভাঙনের কবলে পড়লাম। আর পারি না। মনে হচ্ছে পদ্মা নদীর মাঝখানে গিয়ে ভেসে যাই।

এদিকে ৯নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সোহের রানা জানান, বর্তমানে আটটি প্রাইমারি স্কুল, দুটি হাইস্কুল, দুটি মাদ্রাসা, একটি গোরস্তান, কয়েকটি মসজিদ সহ দ্বোভাগী বাজার ভাঙনের ঝুঁকির মুখে। মাত্র চারশো মিটার দূরে নদীর অবস্থান। তবে প্রশাসন বলছেন ভিন্ন কথা।

আরও পড়ুনঃ  বিহারে অসুস্থ তরুণীকে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে গণধর্ষণ

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ এখনো ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেননি। পাকা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, বর্তমানে ভাঙন বন্ধ আছে। কোন তালিকা তৈরি ও ত্রাণ দেয়া হয়নি। দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আযম জানান, দুই একদিনের মধ্যেই উপজেলা প্রশাসন সহ পরিদর্শনে যাবো এবং এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন. এটি আমার জানা নেই এবং চেয়ারম্যান আমাকে বলেননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজাহার আলি বলেন, নদী ভাঙনে শিবগঞ্জে কেউ বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাছাড়া এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আালী কাউসার জানান, পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণের জন্য ১৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এটি একনেকে অনুমোদন হলেই শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের মাসুদপুর বিওপি হতে পাকা ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত পদ্মার বামতীর ১১.০১৫ কিলোমিটার ও ডান তীর ১০.৪৪০ কিলোমিটার সংরক্ষণ করে নদী ভাঙন রোধ হবে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে বিশেষ অভিযানে ১ জনসহ মোট গ্রেপ্তার ৯

তিনি আরো বলেন, এবারও প্রায় ৬০/৭০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং আরো প্রায় শ খানেক বাড়ি হুমকির মুখে আছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ শাখার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, শিবগঞ্জে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তের সংবাদ আমার কাছে নেই। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় ২৫০ পরিবারের ১২শত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আইয়ুব বিশ্বাস টোলা গ্রামের সাদিকুল ইসলাম, বাদশাহপাড়ার মুকুল ইসলাম, সাহেব আলি, সোহবুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান পাকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের আরো অনেক ব্যক্তি জানান, ২০১৩ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর আবাদি জমি, ১৫ হাজার বাড়ি, সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি বিদ্যুত কেন্দ্র, দুটি বিজিবি ক্যাম্প ,স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, কয়েকটি গোরস্তান ও কয়েকটি হাট বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।