স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে রোপা আউশ, ভুট্টা ও শাকসবজির আবাদ করা প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়দের যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার পানি এখনো বিৎদসীমার ০.৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ১ হাজার ও আলাতুলি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৫০ পরিবার পানিবন্দি। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সাড়ে ৬ হাজার, উজিরপুর ইউনিয়নের ৬০০ এবং দুর্লভপুর ইউনিয়নের সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে।
পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো ডুবে গেছে। এতে যাতায়াত ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং আবাদি জমিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়ি চারদিক থেকে পানিতে ঘেরা, শুধু মূল বসতভিটা শুকনো রয়েছে।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বাড়ির চারপাশে পানি জমেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
দুর্লভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজম আলী জানান, ইউনিয়নের দোভাগী, ফিল্টেরহাট, নামোজগন্নাথপুর ও বাদশাপাড়া এলাকার জমি ডুবে গিয়ে প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিঞা বলেন, পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ১ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭২ হেক্টর আউশ ধান, ৫২ হেক্টর সবজি, ১৩ হেক্টর হলুদ এবং ৫ হেক্টর কলা নষ্ট হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনাইন বিন জামান জানান, সেখানে ৫৯৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এর মধ্যে ৫৪০ হেক্টর আউশ ধান, ৩৫ হেক্টর সবজি ও ২০ হেক্টর ভুট্টা।
পাঠদানের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেশের আলী বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ প্লাবিত হয়েছে। আশপাশের উঁচু জায়গায় পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ০.৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও দুই দিন পানি বাড়তে পারে, তারপর ধীরে ধীরে কমবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও নুরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি হচ্ছে। তাদের মাঝে চাল, তেল, শুকনো খাবার ও ওষুধ বিতরণ করা হবে এবং সার্বিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। শিবগঞ্জের ইউএনও মো. আজাহার আলী জানান, প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, টিন, নগদ অর্থ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।