নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ রবিবার। রাত ৪:১০। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।

পশ্চিম তীর দখল নিয়ে ইসরায়েলকে কড়া বার্তা আরব আমিরাতের

সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫ ৫:৩৮
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : এবার ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরায়েলকে কড়া বার্তা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি সতর্ক করে বলেছে, পশ্চিম তীর দখলের যেকোনো পদক্ষেপ ইসরায়েলকে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করাবে এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করবে।

মূলত ওই চুক্তির মাধ্যমেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল। এদিকে আমিরাতের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ বলেন, এমন পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমিরাতের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।

তবে ইসরায়েলি সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মূলত ইসরায়েলের চরম-উগ্রডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরের চার-পঞ্চমাংশ দখলের প্রস্তাব প্রকাশ করার পরই আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য করা হয়।

বিবিসি বলছে, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি গড়ে তুলেছে, যেখানে প্রায় সাত লাখ ইহুদি বসবাস করছে। একই এলাকায় বসবাস করছে আনুমানিক ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি অবৈধ।

আরও পড়ুনঃ  নুরের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ওই সময় শর্ত ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘স্থগিত’ করার কথা বললেও জানিয়েছিলেন, পরিকল্পনাটি এখনো ‘টেবিলে’ আছে।

ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর বর্তমান সরকারে থাকা বহু মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ আরও কিছু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েল দখল পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক করছে।

নেতানিয়াহু বলেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হবে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’। উল্লেখ্য, আমিরাত আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ‘বিপ্লবী’ এআই-চালিত পোর্টেবল আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইস

লানা নুসাইবেহ বলেন, “আমরা শুরু থেকেই আব্রাহাম চুক্তিকে ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থনের একটি উপায় হিসেবে দেখেছি। পশ্চিম তীর দখল আমিরাতের কাছে এক রেড লাইন। এটি চুক্তির চেতনা ধ্বংস করবে, আঞ্চলিক একীকরণ থামিয়ে দেবে এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক ঐকমত্য ভেঙে দেবে।”

অন্যদিকে জেরুজালেমে সংবাদ সম্মেলনে স্মোট্রিচ বলেন, “এখন সময় এসেছে দখলের। দেশ ভাগ করে মাঝখানে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গড়ার ধারণা চিরতরে বাদ দিতে হবে।”

তিনি একটি মানচিত্র দেখান, যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বসতি প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বাকি ১৮ শতাংশ এলাকা ছয়টি ফিলিস্তিনি শহর— জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরনের চারপাশের ছোট ছোট অংশে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। বেথলেহেমসহ বহু ফিলিস্তিনি শহর, গ্রাম ও এলাকা এতে বাদ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব জেরুজালেম ইসরায়েল ১৯৮০ সালে দখল করলেও আন্তর্জাতিক মহলের বিশাল অংশ সেটি স্বীকৃতি দেয়নি।

আরও পড়ুনঃ  পাকিস্তানের ওপর শোধ তুলে ফাইনালের পথে আফগানরা

স্মোট্রিচ দাবি করেন, ফিলিস্তিনিরা আপাতত আগের মতোই নিজেদের জীবনযাপন চালিয়ে যাবে, পরে বিকল্প আঞ্চলিক বেসামরিক প্রশাসনের মাধ্যমে তা পরিচালিত হতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনাকে স্বাধীন রাষ্ট্রের আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্য ‘সরাসরি হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতোমধ্যে একটি বর্ণবাদী ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে ইসরায়েলি সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এর আগে গত মাসে ইসরায়েলি সরকার পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের একটি বড় পরিকল্পনা অনুমোদন করলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই পরিকল্পনা কার্যকর হলে পশ্চিম তীর পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।