স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে আশ্বস্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, ‘তাদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না। যারা এ জমি দখলের চেষ্টা করছেন তাদের ‘লালঘরে’ যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় মোল্লাপাড়ায় গিয়ে পাহাড়িয়াদের নিয়ে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন। মিনু বলেন, ‘এই দেশ সবার। এরা জন্মসূত্রে এই জায়গার মালিক হয়েছে। আমাদের বর্তমান নেতা তারেক রহমান। এটি উনি দেশের বাইরে থেকে নিজে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সমাজের এই গরিব-অসহায় মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। যিনি এখন জমি দাবি করছেন, এরা হচ্ছে ভূমিদস্যু, জাতির শত্রু।’
রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র ও সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এদের নাম কোন দিন শুনিনি। আমি এলাকার রাস্তাঘাট করেছিলাম। তাই জমির দাম অগ্নিমূল্য হয়েছে। এখন ভুয়া দলিল করে দখলের চেষ্টা করছে। এই ধরনের সংবাদ আরও আছে। আমরা সবকিছুই দেখছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি। শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা আমরা এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আছি, আপমৃত্যু থাকব। আপনাদের কেউ এখান থেকে তুলতে পারবে না। কোনো ভয় নাই।’
পাহাড়িয়াদের উদ্দেশ্যে মিনু বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশ এই বিষয়টা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আছে। ভাই পাবেন না। এখনই মাইকে হুকুম দিয়ে অনেক কিছুই করাতে পারি, কিন্তু আমরা আইনকে সম্মান করি। এখানে আপনারা যুগের পর যুগ আছেন। এখানে আপনাদের জন্ম হয়েছে, পূর্বপুরুষরা মারা গেছে। এই মাটি আপনাদের ছিল, আপনাদের আছে, সারাজীবন আপনাদেরই থাকবে। কেউ অসহায় ভাববেন না। আমরা সবাই আছি আপনাদের সঙ্গে। সারাদেশ আছে, বিএনপি আছে। আপনারা বাড়িঘর আরও ভাল করে করেন।’
জমির দাবিদার সাজ্জাদ আলীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ভুয়া দলিল করেছেন, তারা রেডি হয়ে যান। যারা মনে করছেন গরিব মানুষকে ভয় দেখাবেন, তারা লালঘরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যান। কোনো লাভ নেই। এটা দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছে যাবে। আপনি এই জমির আগে কত টাকার মালিক ছিলেন, এই এলাকায় এখন আপনার কতগুলো জমি আছে, কারা কারা এদের গোরস্থান বন্ধ করেছেন, সমস্ত কিছুই আইনের দ্বারাই করব।’
এ জমি পাহাড়িয়াদেরই দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মিনু বলেন, ‘আল্লাহ যদি আমাদের দায়িত্ব দেয়, দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের অধিকারের কারণে যেভাবেই হোক এটা যেন আপনাদের নামে যেন হয় সেটা করব। আমার বয়স্ক মায়েরা ভয় পাচ্ছে আমি জানি, কোনো ভয় নেই। সবাই মিলে পাশে আছি। আমি চেষ্টা করব দ্রুতই প্রশাসন দিয়ে আপনাদের গোরস্থান যেন ঠিক থাকে।’
এর আগে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনারুল ইসলাম, মহল্লার সর্দার বাবলু বিশ্বাস বাসিন্দা বিশনি বিশ্বাস ও সরলা বিশ্বাস বক্তব্য দেন। পাহাড়িয়ারা কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের পর ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে এখন বাড়ি হয়েছে ১৬টি। এত দিন পর সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি এই ১৬ কাঠা জমির মালিকানা দাবি করছেন। তিনি ১৬টি পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে উচ্ছেদের আয়োজন করেছিলেন। তিনটি পরিবার কয়েক দিন আগেই বাড়ি ছাড়ে।
গত শুক্রবার সেখানে খাসি কেটে খাইয়ে-দাইয়ে তাদের ‘বিদায়ের’ আয়োজন ছিল। আর রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ঘর ছাড়তে হতো বাকিদের। এ নিয়ে গত বুধবার আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। ভেস্তে যায় খাসি ভোজের আয়োজন।
পরদিন বৃহস্পতিবারই পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার সকালে ওই মহল্লায় যান আদিবাসী সংগঠনের নেতা-কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মীরা। সেখানে তাঁরা মানববন্ধন করেন। খোঁজ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। লন্ডন থেকে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের ফোন করে ওই মহল্লায় পাঠান।
পাহাড়িয়াদের বসতবাড়ি রক্ষার দাবিতে গত শনিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরাও একটি মানববন্ধন করেন। একই দিন মানববন্ধন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, রাজশাহী ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। রোববার ঢাকা থেকে এসে পাহাড়িয়াদের সঙ্গে কথা বলেন মানবাধিকারকর্মীরা।