পিন্টু আলী (চারঘাট) রাজশাহী : দেয়ালে রঙের প্রলেপ উঠে গেছে অনেক আগে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। দেয়াল, ছাদ ও পিলারের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। কোথাও কোথাও বেরিয়ে এসেছে রড। একটু বৃষ্টিতেই ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। এমনই বেহাল অবস্থা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন ক্লাসরুম বিশিষ্ট একমাত্র ভবনের। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও ২১৮ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ এই ভবনের মাত্র ১৭ সেট বেঞ্চে।
হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৭৩ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১৮ জন। বিদ্যালয়ের তিন ক্লাসরুম বিশিষ্ট একমাত্র ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৩ সালে। ভবনটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে ২০১৮ সালে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। ভবন নির্মাণের সময় ৩৯ সেট বেঞ্চ দেওয়া হয়। বর্তমানে ২২ সেট বেঞ্চ নষ্ট হয়ে গেছে। মাত্র ১৭ সেট বেঞ্চ ব্যবহার উপযোগী আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও অপ্রতুল বেঞ্চে চলছে পাঠদান।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির এক তলা ভবনটিতে তিনটি ক্লাসরুম। এর মধ্যে একটি ক্লাসরুমকে ছোট করে দেয়াল তুলে ছোট্ট রুম তৈরি করে অফিস কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। কক্ষ সংকটের কারণে ছোট্ট সেই অফিস কক্ষে গাদাগাদি করে প্রধান শিক্ষকসহ চার সহকারী শিক্ষকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্লাসরুমগুলোর ফ্যানের রডগুলো খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বেঞ্চ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা একটি বেঞ্চে ৫-৬ জন বসে ক্লাস করছে। কোনো শিক্ষার্থী ভাঙা বেঞ্চেই বসে ক্লাস করছে।
এসময় কথা হয় সহকারী শিক্ষিক শরিফা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে প্রথম শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছিলাম, এসময় ছাদের রডসহ ফ্যানটি খুলে আমার ঘাড়ের উপরে পড়ে। চিকিৎসা নেওয়ার পরেও আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ না। তবুও শুকরিয়া আমার শিক্ষার্থী আহত হয়নি। ক্লাস নিই আর ভাবি ছোট ছোট সোনামণিরা ক্লাস করে, একটা ক্ষতি হয়ে গেলে অভিভাবকদের কাছে আমরা কি জবাব দেবো!
৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, টিভিতে, বইয়ের ছবিতে কত সুন্দর সুন্দর ক্লাসরুম ও বেঞ্চ দেখি। কিন্তু আমরা লিখার সময় ছাদ থেকে সিমেন্ট খুলে পড়ে। বৃষ্টি হলে বই খাতা ভিজে যায়। গাদাগাদি করে আমাদের বসতে হয়।
এ সময় বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশে অপেক্ষারত অভিভাবক রাবেয়া খাতুন বলেন, স্কুল বাচ্চাদের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এমনটাই জানতাম। কিন্তু স্কুল এখন আমাদের অভিভাবকদের কাছে আতঙ্কের নাম। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণে অনেক বাচ্চা স্কুলে আসছেনা। আমরা মেয়েও একা আসতে ভয় করছে যদি ঘর ভেঙে পড়ে। এজন্য মেয়েকে ভেতরে ক্লাসে রেখে আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।
স্থানীয় নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থা খুবই নাজুক। আল্লাহ না করুক কখন দূর্ঘটনা ঘটে। না আছে ক্লাসরুম, না আছে বেঞ্চ। সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই বললেই চলে। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলেও বড় বড় ভবন ও শত শত বেঞ্চ রয়েছে। অথচ এখানে শিক্ষার্থী থাকলেও প্রয়োজনীয় কিছুই নেই। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটির কাছেও তুলে ধরা হয়েছে।
হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বিভিন্ন দপ্তরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও প্রতিকার পাচ্ছিনা। ১৯৯৪ সালের পর আর বেঞ্চও পাওয়া যায়নি। মাত্র ১৭ বেঞ্চ ব্যবহার উপযোগী আছে। এসব নানা সংকটে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পাঠাতে চাচ্ছেন না। কতদিন এভাবে চালিয়ে নিতে পারবো জানিনা।
চারঘাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক দফা বিভিন্ন প্রকৌশলী ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। আমরাও কয়েক বছর ধরে ভবনের চাহিদার প্রথম নাম্বারে ওই বিদ্যালয়ের নাম পাঠাই। কিন্তু এ বছরও ওই ইউনিয়নের ছয়টি বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের বরাদ্দ আসলেও ওই বিদ্যালয়ের টা আসেনি। নতুন ভবন না হবার কারণে বেঞ্চের বরাদ্দও হচ্ছেনা।