ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ছলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে আটক এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নিহতের নাম আব্দুল্লাহ (২৩/২৭)। তিনি চুরির অভিযোগে আটক ছিলেন। এ ঘটনায় সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মো. মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার দাবি করেছে, গণপিটুনির পর পুলিশের নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া নবীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আব্দুল্লাহ বিষ্ণুরামপুর বাজার এলাকায় বসবাস করতেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ছলিমগঞ্জ ক্যাম্পে আটক ছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর বাড়াইল গ্রামে গণপিটুনির শিকার হওয়ার পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কোনো আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই আটক রেখে ইনচার্জ মহিউদ্দিনসহ অন্যরা নির্যাতন চালায়। এর ফলেই তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে।
২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে অবস্থার অবনতি হলে আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জের অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওইদিন রাতেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
সাকিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।” মামলায় এসআই মহিউদ্দিন ছাড়াও তবি মিয়া, আলামিন ও আয়নাল হককে আসামি করা হয়েছে। আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকে উত্তেজিত জনতা ছলিমগঞ্জ ক্যাম্প ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ক্যাম্পটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে এবং এলাকায় সেনা মোতায়েন করে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আজিমুদ্দিন বলেন, “পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু কেবল একটি পরিবার নয়, গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দেয়। তাই এর স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া জরুরি।”
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম বলেন, “গণপিটুনির পর আব্দুল্লাহকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, “ঘটনার পরপরই এসআই মহিউদ্দিনকে বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।”
এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।