স্টাফ রিপোর্টার : দেশব্যাপী সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো রাজশাহীতেও শুরু হলো জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রাজশাহীর পবা উপজেলার সিলিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের সময় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমায়রা আক্তার হিমকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই কর্মসূচির।
এক মাসব্যাপী এই কার্যক্রম চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। রাজশাহী জেলায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী মোট পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ১২৩ জন শিশু-কিশোর-কিশোরীকে বিনামূল্যে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। জন্মসনদবিহীন শিশুরাও এই কর্মসূচির আওতায় আসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার।
তিনি বলেন,“শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পদ। তাই তাদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে হলে টিকাদানের বিকল্প নেই। টাইফয়েড টিকার এই উদ্যোগ একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা আমাদের আগামী প্রজন্মকে মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা দেবে।”
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবা খাতুনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. এসআইএম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “এই টিকাদান কর্মসূচি দেশের ইতিহাসে প্রথম। রাজশাহী জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিশু-কিশোরকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জন্মসনদ নেই এমন শিশুরাও টিকার আওতায় আসবে। এই ক্যাম্পেইন চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।”
তিনি আরও বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইতোমধ্যে নেপাল, পাকিস্তানসহ আটটি দেশে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং কোথাও বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত এই টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা ‘গ্যাভি’র সহযোগিতায়।
এছাড়াও বক্তব্য দেন— উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ, হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুবাইদা রোশন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা খাতুন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন করা প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় টিকা পাবে। এরপর ১ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী অন্য শিশুদের কমিউনিটি পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে। শহরের পথশিশুদের টিকাদানের দায়িত্ব পালন করবে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও এনজিও।
স্বাস্থ্য বিভাগ আশা করছে, এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশে টাইফয়েড জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং শিশুদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।