অনলাইন ডেস্ক : প্রতিবেশী আফগানিস্তানকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান যদি কট্টরপন্থি সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে মদত দেওয়া বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে।
শনিবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আফগানিস্তানের সঙ্গে কখনও আমাদের আদর্শ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ছিল না এবং এর দায় আমাদের নয়। একজন ভালো প্রতিশীর মতো পাকিস্তান বরাবর আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছে; কিন্তু আফগানিস্তান সব সময় পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিতে চেয়েছে এবং নিজেদের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ করে তুলেছে।”
“আমরা সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আফগানিস্তানের সহযোগিতা চাই। কাবুল যদি সহযোগিতা করে, তাহলে ভালো; যদি তা না করে— তাহলে বর্তমানে যা আছে, তার চেয়েও খারাপ হবে দুই দেশের সম্পর্ক।”
প্রসঙ্গত, শনিবার খাজা আসিফ এই বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সংঘাত হয় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, আফগান সেনাবাহিনী ‘বিনা উসকানিতে’ সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানের ওপর হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের বক্তব্য, গত বৃহস্পতিবার কাবুলে বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। তার জবাব দিতেই সীমান্তে হামলা চালিয়েছে আফগান সেনাবাহিনী।
শনিবার রাতভর আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররম, দির, চিত্রাল, বারামচাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত হয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর। সকালে এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃবিভাগ সংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় আফগানিস্তানের ১৯টি সেনাপোস্ট দখল করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। আরও বলা হয়েছে, আফগান সেনাদের সঙ্গে সংঘাতের সময় গোলাবারুদ, ট্যাংক, ড্রোন এবং হালকা ও ভারী— উভয় ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন পাক সেনারা।
আইএসপিআরের এই বিবৃতি প্রদানের কয়েক ঘণ্টা পর পাল্টা বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সরকারি মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেছেন, সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫টি সেনাপোস্ট দখল করেছে আফগান সেনাবাহিনী এবং এ সময় সংঘাতে পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও প্রস্তুত হয়ে ছিল। আফগানিস্তানের হামলার পরপরই পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সহায়তা প্রদানের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এতে টিটিপি প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদ নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে ক্বারী সাইফুল্লাহ মেসুদসহ তার কয়েকজন সহযোগীও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইফুল্লাহ মেসুদকে টিটিপির পরবর্তী প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।
ওই হামলার পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল আফগানিস্তান। তারপর ঘটে শনিবারের হামলা।