স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার খাড়ইল গ্রামে ১১ এনজিও ও সুদে থেকে ঋণ নেওয়া একজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তার নাম আকবর হোসেন (৫০)। তিনি খাড়ইল গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। তিনি অন্তত ১১টি এনজিও এবং স্থানীয় সুদ কারবারিদের কাছ থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারছিলেন না। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় নিজের পান বরজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আকবর হোসেনের ছেলে সুজন শাহ ঋণের ‘চাপে’ আত্মহত্যার কথা জানিয়েছেন।
নিহতের বড় ছেলে সুমন হোসেন শাহ জানান, প্রতিদিনের মত তার বাবা পান বরজ দেখাশোনার জন্য খুব ভোরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ছয়জন শ্রমিক নিয়ে তিনিও পান বরজে যান। সেখানে গিয়ে তার বাবাকে দেখতে পাননি। খোজাখুজি পর পাশের আরেকটি পান বরজে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় তার বাবাকে দেখতে পায়। পরে শ্রমিকদের সহযোগীতায় মৃতদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এছাড়াও পুলিশ ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন।
সুজন বলেন, ‘আমার বাবা এনজিও থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার পানের দাম নাই। এক বিঘা জমির পান বরজের আয়েই আমাদের সংসার চলতো। ঋণের কিস্তি ছিল প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু এবার পানের দাম না পেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছিলো। প্রতিদিন কিস্তির জন্য এনজিওর লোকেরা চাপ দিতেন। ঋণের চাপে পড়ে বাবা আত্মহত্যা করেছেন।’
তিনি জানান, তার বাবার ঋণ ছিল ব্রাক, আশা, প্রশিকা, ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক), ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ডিএফইডি), শাপলা গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক), ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), গ্রামীণ প্রচেষ্টা, পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি (পিএমকে), গ্রামীণ উন্নয়ন কেন্দ্র (গাক) নামের এনজিওতে।
রাজশাহীর মোহনপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘আকবর হোসেনের পান বরজ ছিল। কৃষক মানুষ, ঋণ ছিল। এ বছর পান বরজে লোকসান হওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। হতাশা থেকে তিনি নিজের পান বরজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’ নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
তিনি বলেন, ‘নিহতের স্বজনরা যদি এনজিওর নামে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন, তবে মামলা হবে। কিন্তু তার পরিবার মামলা করবে না। ময়নাতদন্ত করতেও রাজি হচ্ছে না।’
সুজন শাহ (৩০) ছাড়াও আকবর হোসেনের আরেক ছেলে রয়েছে। তার নাম সুমন শাহ (১৮)।
প্রসঙ্গত, এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ‘ঋণের চাপে ও খাবারের অভাবে’ স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেন মিনারুল নামের এক ব্যক্তি।