নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শুক্রবার। রাত ১১:৪৬। ৬ জুন, ২০২৫।

‘কিছুই থামছে না’ : শান্তি আলোচনা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না, বলছেন ইউক্রেনীয় সেনারা

জুন ৪, ২০২৫ ৪:১১
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষে পদার্পণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেন যখন শান্তি আলোচনায় বসেছে, তখন পূর্ব ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনের কাছাকাছি অবস্থান করা ইউক্রেনীয় সেনারা বলছেন, বাস্তবে যুদ্ধ থেমে নেই।

ইউক্রেনের ড্রুজকিভকা থেকে এএফপি জানায়, ফ্রন্টলাইন থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের শহর ড্রুজকিভকায় প্রচণ্ড রোদে কফির কাপ হাতে বসে ২৭ বছর বয়সী প্লাটুন কমান্ডার আন্দ্রিই বলেন, ‘কিছুই থামছে না। সবকিছু আগের মতোই চলছে।’

সোমবার ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরের আকাশে রুশ গ্লাইড বোমার শব্দ শোনা যায়, এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো আছড়ে পড়ে। পরদিন সকালে যারা এখনো শহর ছাড়েননি, তারা ধ্বংসস্তূপে ঘেরা রাস্তা পেরিয়ে দৈনন্দিন কাজে বের হন।

আন্দ্রিই আশা করছেন, এ বছরই যুদ্ধের অবসান হবে। তিনি মনে করেন, আলোচনার ধারা চালু রাখা উচিত, যদিও এ পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে চারটি অঞ্চল—ডোনেৎস্ক, খেরসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়া—থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের যে শর্ত তোলা হয়েছে, তা সম্পর্কে তিনি সংশয়ী।

আরও পড়ুনঃ  এবার বাবর-শাহিনদের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে পিসিবি!

তিনি বলেন, ‘ওটা তো অনেক বেশি দাবি। তবে যদি বর্তমান সীমান্ত রেখাই থাকত, তাহলে হয়তো কিছু হতো।’

বাস্তবতার সঙ্গে যোগ নেই

ড্রুজকিভকায় তার পাশেই ছিলেন ‘লেলেকা’ ছদ্মনামে পরিচিত এক ত্রিশোর্ধ্ব সেনা, যিনি সদ্য তোরেৎস্ক শহর থেকে ফিরেছেন। ওই শহরটি পূর্ব ইউক্রেনের সবচেয়ে উত্তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর একটি, এবং এ বছরের শুরুতে রাশিয়া এটি দখলের দাবি করে।

লেলেকা বলেন, ‘সত্যি বলতে, অনেকদিন হলো আমি খবর দেখি না। কারণ, ওগুলো আমাদের বাস্তবতায় কোনো প্রভাব ফেলে না। সবকিছু যেন সমান্তরাল কোনো বাস্তবতার মতো।’

তিনি বলেন, ‘আলোচনার নামে কিছু হয় না। কিভাবে হবে? একদিকে শান্তির কথা, আরেকদিকে ওরা আমাদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।’

এখন পর্যন্ত আলোচনার ফল হিসেবে কেবল যুদ্ধবন্দি বিনিময় হয়েছে। পূর্ণ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাশিয়া বারবার ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আলোচনা দীর্ঘায়িত করার এবং আক্রমণ বন্ধে আন্তরিক না হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।

মঙ্গলবার ক্রেমলিন বলেছে, আলোচনা ‘অত্যন্ত জটিল’ এবং তাৎক্ষণিক অগ্রগতির আশা করা ‘ভুল’।

লেলেকা বলেন, এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ‘স্থানীয় কমান্ডাররা এটা হতে দেবেন না।’

‘যুদ্ধ থামাতে চাইলে আরও অস্ত্র দিন’

৫৯ বছর বয়সী উপ-কমান্ডার ‘দিদ’—যার ডাকনামের অর্থ ইউক্রেনীয় ভাষায় ‘দাদু’—বলেন, নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি ছাড়া যুদ্ধ থামানোর কোনো ‘যৌক্তিক’ পথ নেই। তবে তিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে আপোসের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন। ‘ওদের হাতে বেশি অস্ত্র, কারখানাগুলো চালু, মানুষের সংখ্যাও বেশি, আর উত্তর কোরিয়া ও চীন তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। তারা কেন থামবে?’

তিনি বলেন, ‘তাদের থামাতে হলে এমনভাবে মারতে হবে যাতে দাঁত পড়ে যায় কিংবা নিজের দাঁত গিলে ফেলে।’

আরও পড়ুনঃ  তানোরের ২২০ জন শিক্ষার্থী পেলো ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপহার আল কোরআন

মস্কো ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির বদলে আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে—দুই থেকে তিন দিনের জন্য এবং নির্দিষ্ট কিছু এলাকা পর্যন্ত। লেলেকা বলেন, ‘তাদের এই বিরতি দরকার। তারা তাদের সেনা পুনর্গঠনের সুযোগ চায়, রসদ সংগ্রহের সময় চায়।’

তাদের মতে, বরং পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনকে আরও বেশি অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা উচিত। দিদ বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র দিন। আমরা ওগুলো চালাতে জানি। ভালো অস্ত্র দিন, আমরা ওদের থামিয়ে দেব। কিভাবে থামাতে হয়, সেটা আমরা জানি।’

আলাদা দাঁড়িয়ে থাকা আন্দ্রিই মাথা নিচু করে বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরতে চাই, একটু বিশ্রাম নিতে চাই।’ তিনি তিন বছর ধরে যুদ্ধে আছেন, আর এই যুদ্ধ চলাকালেই তার বিয়ে হয়। ‘যেভাবেই হোক, আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।