নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বৃহস্পতিবার। রাত ৮:৪৬। ৮ মে, ২০২৫।

গোদাগাড়ীতে অ্যাম্বুলেন্স-ট্রাক সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ নিহত ৩

মার্চ ৩, ২০২৫ ১০:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : হাত-পা ছড়িয়ে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন সুমি রানী (৩৪)। চোখেমুখে ক্ষত চিহ্ন, সাড়াশব্দ নেই। একজন চিকিৎসক এসে সুমির কপালে একটু চাপ দিতেই ‘ওরে বাবারে, ওরে বাবারে’ বলে একটু চিৎকার। এরপর আবার চুপ। চিকিৎসক জানালেন, এই তরুণীর জিসিএস (চেতনার মাত্রা) কমে ১২-তে নেমে গেছে।

সোমবার ভোরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাটে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে আহত সুমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছটফট করছেন সুমির ভাই অসীম মুরালি ও তাঁর বোনের ছেলে সুবেদ মুরালি। তাঁদের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার ঠাকুরযৌবন গ্রামে।

এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সুমির মা সুন্দরী পাহান (৬০), বোন আদরী রানী (৪৫) ও গোদাগাড়ী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক জাফর ইকবাল (৪৫)। জাফর রাজশাহী নগরের হোসনীগঞ্জ মহল্লার বাসিন্দা।

হাসপাতালে কথা হয় সুবেদের বাবা হিরালাল মুরালির সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে তাঁর শাশুড়ি সুন্দরী পাহান অসুস্থ ছিলেন। রোববার রাত ১২টার দিকে তাঁর কথা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাঁকে গোদাগাড়ী উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করেই সুন্দরীকে রাজশাহী আনা হচ্ছিল। পথে রাজাবাড়ীহাট এলাকায় একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রোগীসহ তিনজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আহত তিনজনকে হাসপাতালে আনেন।

হিরালাল জানান, তাঁরা কৃষক। হাতে নগদ টাকা থাকে না। বাড়িতে অল্প কিছু টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে রাতে সুন্দরীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার পর টাকা ধার করে এনেছেন। সকালে তিন রোগীর জন্য ৭ হাজার ৭০০ টাকার ওষুধ, ইনজেকশন কিনে এনেছেন।

পাশে মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করা অসীমকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন স্ত্রী কিরণ মুরালি। তিনি এক হাতে স্যালাইনের বোতল উঁচু করে ধরেছিলেন। আরেক হাতে ধরেছিলেন কোলের ঘুমন্ত শিশু।

আহত সুবেদের ভায়রা ভাই নিরঞ্জন মুর্মু বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে দ্রুত যাবে, তাকে সব গাড়ি সাইড দেবে, এটাই নিয়ম। ট্রাক নিশ্চয় এই নিয়ম মানেনি। তাই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

নিরঞ্জন জানান, হাসপাতালে আসার সময় তিনি দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছেন। সেখানে শোনেন, স্থানীয় লোকজন ট্রাকচালকের সহকারীকে ধরেছিলেন। পালানোর আগে তিনি লোকজনকে জানান ট্রাকে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। দুর্ঘটনা কীভাবে হয়েছে তা জানেন না। আর দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান ট্রাকচালক।

রামেক হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার আরাফাত হোসেন জানান, ভর্তি থাকা তিন রোগীরই চেতনার মাত্রা কমেছে। একজন মানুষের স্বাভাবিক চেতনার মাত্রা থাকে ১৫। সুমির এখন মাত্রা ১২। অন্য দুজনের ১৪। মাত্রা তিন হলে মানুষ মারা যায়।

আরাফাত হোসেন বলেন, তিন রোগীরই সিটি স্ক্যান করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের মেশিনটি এই মুহূর্তে কাজ করছে যান। এসব রোগীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সিটি স্ক্যান করাও খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক এস এম মাকসুদুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পর তিনজনের লাশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। চিকিৎসক প্রয়োজন বোধ করলে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাবেন। না হলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়েছেন। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।