স্টাফ রিপোর্টার : চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৭ বছর তারপরও ছাড়েনি সরকারি কোয়াটার। আর কোয়াটার ছাড়াতে গিয়ে অসহায় হয়ে পরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটা ঘটছে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্টাফ কোয়াটার নিয়ে।
রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানাধীন সিটি বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল বা টিবি হাসপাতাল। হাসপাতালের পূর্ব পাশে অবস্থিত হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকতা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য চারটি বাড়ি বা কোয়াটার। এইসব কোয়াটারগুলো বিনা ভাড়ায় দখল করছে হাসপাতালের কর্মচারীরা। চারটি কোয়াটারের মধ্যে একটি কোয়াটারে বসবাস করে সাবেক ক্যাশিয়ার বজলুর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা: হুসনে আরা খানম (ঝর্না)। একযুগ ধরে বসবাস করলেও সরকারকে দেননি একটাকা ভাড়া। ফ্রীতে থাকতে পেয়ে অবসরে যাওয়ার পরও কোয়াটার ছাড়েনি এই দম্পতি। বজলুর রহমান রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন। তিনি ২০১৭/১৮ সালে অবসরে যান, তিনি অবসরে যাওয়ার পরে কোয়াটারটি তার স্ত্রীর চাকরির সুবাদে দখল করে রাখেন। তার স্ত্রী ছিলেন এই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স, তিনিও অবসরে যান গত দুই বছর আগে। তারপরও দিব্যি বসবাস করছেন সরকারী হাসপাতালের এই কোয়াটারে। শহরে স্বামী স্ত্রী দুইজনেরই জমি আছে তারপরও ফ্রীতে থাকার জন্য চাকরি শেষে নিজেদের কোন বাড়ি নির্মান করেনি।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চারটি কোয়াটার আছে, একটি কোয়াটার হাসপাতাল সুপারের, একটি আবাসিক মেডিকেল অফিসারের, দুইটি ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বসবাসের জন্য।
সাবেক ক্যাশিয়ার বজলুর রহমানের ভাষ্যমতো গত ১ যুগ আগে চারটি কোয়াটারকে গণপূর্ত বিভাগ বসবাসের অনুপোযোগী ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তারপর সাবেক ক্যাশিয়ার বজলুর রহমান তার পরিবার নিয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের জন্য নির্ধারিত কোয়াটারে বসবাস শুরু করে। কোয়াটারগুলো বাজেয়াপ্ত করার জন্য তাদেরকে কোন ভাড়া দেয়া লাগেনা আর এভাবেই প্রায় ১ যুগ বিনা পয়সায় বসবাস করছেন বজলুর রহমান। নিজের নামে বিদ্যুৎ সংযোগও নিয়েছেন তিনি। তবে সরকারি কোয়াটার বা বাড়িতে ব্যাক্তির নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার কোন নিয়ম নাই। এই বিষয়ে বজলুর রহমান বলেন, “সেই সময় আমি দলের নেতাদের দিয়ে সুপারিশ করিয়ে তৎকালীন রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছি।”
সাবেক ক্যাশিয়ার বজলুর রহমান আরও বলেন, “আমি মুচলেকা দিয়ে বসবাস করছি, আমার কোন ক্ষতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়িনা। এমন মুচলেকার বৈধতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। তবে অকপটে স্বীকার করে বিনা ভাড়ায় থাকতে পারছে বলে শহরে বসতবাড়ি করার জমি থাকলেও সেখানে বাড়ি নির্মান করেনি।”
কোয়াটার ছাড়ার তাগাদা পত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সহকারী পরিচালককে বলেছি বাড়ি বানানো হয়ে গেলেই কোয়াটার ছেড়ে দিবো। কবে নাগাদ বাড়ি বানাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিস্ত্রির সমস্যার জন্য কাজ শুরু করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, আ্মিই না এভাবে ফ্রীতে বসবাস করছে রাজশাহী বক্ষব্যাধি (টিবি) হাসপাতালের অন্য তিনটি কোয়াটারেও।
প্রথম কোয়াটারে থাকে অত্র হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স জেবুন নেসা। তার স্বামী সাদরুল রামেক হাসপাতালের নার্স, দ্বিতীয়টিতে থাকে বজলুর রশিদ ও মোসা: হুসনে আরা খানম (ঝর্না), সুপারের কোয়াটারে থাকে কম্পিউটার অপারেটর ববি ও তার স্বামী মশিউর রহমান, চতুর্থ কোয়াটারে থাকে সিনিয়র স্টাফ নার্স আফরোজা আক্তার ও স্টুয়ার্ড খাদিজাতুল কোবরা। তারা সকলেই ফ্রীতে বসবাস করে। এবং প্রতিটি কোয়াটারই বসবাসের অযোগ্য ও ঝুকিপূর্ণ কোয়াটার।
তবে এইসব কোয়াটারে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অনিয়ম, বিনা ভাড়ায় থাকা হাসপাতালের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়নিয়ে অত্র হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: মোহা: মজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কোয়াটার গুলো বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করার পরে দেখাশোনা করার জন্য তাদেরকে থাকতে দেয়া হয়েছিলো। বজলুর রশিদ ও মোসা: হুসনে আরা খানম ঝর্নাকে কোয়াটার ছাড়ার জন্য একাধিক তাগাদা পত্র দেয়া হয়েছে তারপরও তিনি কোয়াটার ছাড়েনি। হাসপাতালের অফিসারদের দিয়েও বলা হয়েছে, শত অনুরোধ করেও তাকে কোয়াটার থেকে বের করা যাচ্ছে না।”
বসবাসের অযোগ্য কোয়াটারে থাকা ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার বিষয় নিয়ে গণপূর্ত বিভাগ- ২ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কোন ভবন বা বাসাকে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করার পরে আমাদের আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সেখানে কেউ বসবাস করলে বা কোন সুযোগ সুবিধা ভোগ করলে সেই প্রতিষ্ঠানই তার জবাবদিহীতা করবে, কোন দূর্ঘটনা ঘটলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান সেটা দেখবে। তবে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করার পরে থাকতে দেওয়ার কোন সুযোগ গণপূর্ত বিভাগ দেয় না।”
বসবাসের অযোগ্য কোয়াটারে বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যাবহারের বিষয়ে নেসকো মোল্লাপাড়ার এক্সচেঞ্জ অফিসার জানান, “কোয়াটারগুলো বসবাসের অযোগ্য এটা আমার জানা নাই, তবে বসবাসের অযোগ্য কোয়াটারে বা ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নিয়ম নাই, বিষয়টি আমি দেখবো।”
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের একাধিক কর্মচারি বলেন, “বজলুর রশিদ একজন নির্লজ্জ বেহায়া মানুষ, স্বামী স্ত্রী দুইজনে মিলে পেনশন পেয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা তারপরও তারা নিজেদের বাড়ি করেনি, ফ্রীতে সরকারি কোয়াটারেই থাকছে।”
অত্র হাসপাতালের চারটি কোয়াটারই গণপূর্ত বিভাগ থেকে বসবাসের অযোগ্য ও ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে তারপরও সেখানে হাসপাতালের স্টাফ নার্স কম্পিউটার অপারেটর অফিস সহায়করা বিনা পয়সায় বসবাস করছেন। এমনকি সরকারি কোয়াটারে ব্যাক্তির নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার মতো অনিয়মও চলছে এই সব কোয়াটারগুলোতে।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কোয়াটারের অনিয়ম নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: মো: হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি হাসপাতাল সহকারী পরিচালকের কাছে মৌখিকভাবে শুনেছি, আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।”
উল্লেখ যে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অনেক জমি-পুকুর অবৈধভাবে দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণসহ দোকানপাট নির্মান করেছে কতিপয় অসাধুচক্র। এনিয়ে আদালতে মামলা চলমান।