নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ শুক্রবার। রাত ৮:৪২। ১৪ নভেম্বর, ২০২৫।

ছেলে খুনের ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক

নভেম্বর ১৪, ২০২৫ ৫:০৬
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমান তার ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন। শুক্রবার দুপুরে তিনি মামলার এজাহারে সই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরের গ্রামের বাড়ি রওনা হন। পরে রাজপাড়া থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার, সিটিটিসি (চলতি দায়িত্বে) ও এডিসি (মিডিয়া) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়া (৩৪)। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

আসামি লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামে। তার বাবার নাম এসএম সোলায়মান শেখ। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। লিমন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে তার চাকরি চলে যায়। এর পর থেকে তিনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন লিমন। তবে সংসার টেকেনি। বিচারক আব্দুর রহমানের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসীর (৪৪) সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় ছিল। তার কাছ থেকে লিমন প্রায় সময়ই টাকা নিতেন।

পুলিশের ভাষ্য, টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন লিমন। দিয়েছিলেন প্রাণনাশের হুমকিও। এ নিয়ে গত ৬ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তাসমিনা। মেয়ের বাসায় থাকা অবস্থায় সিলেটের জালালাবাদ থানায় জিডিটি করা হয়।

জজ আব্দুর রহমান প্রায় একবছর আগে শ্রম আদালতের বিচারক হয়ে রাজশাহী আসেন। গতমাসে তাকে মহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদায়ন করা হয়। রাজশাহী আসার পর নগরীর তেরখাদিয়া ডাবতলা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। সেখানে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে তাওসিফকে নিয়ে থাকতেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় এ বাসায় যান লিমন। সেখানে তাওসিফকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাসমিনা নাহারও। এছাড়া ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী নিজেও আহত হন। পরে তিনজনকেই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাওসিফকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে তাওসিফের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন ও একই বিভাগের প্রভাষক শারমিন সোবহান কাবেরী। ময়নাতদন্ত শেষে মর্গের ভেতরে ঢুকে ছেলের মরদেহ একনজর দেখতে যান তার বাবা বিচারক আবদুর রহমান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রামেকের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কফিল উদ্দিন জানান, তাওসিফের ডান উরু, ডান পা ও বা বাহুতে ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। এই তিনটি জায়গায় রক্তনালী আছে। সেগুলো কেটে গিয়েছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও ছিল শরীরে। তারা মনে করছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তাওসিফের গলায় কালশিরা দাগ আছে বলে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের কারণে এই দাগটি হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও শ্বাস রোধে হত্যার চেষ্টা একই সময়ে হয়েছে বলেও জানান ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।

ময়নাতদন্তের পর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী সেন্টারের সদস্যরা রামেক হাসপাতালের নির্ধারিত কক্ষে মরদেহের গোসল করিয়ে দেন। পরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত তাওসিফ রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।