নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা বৃহস্পতিবার। দুপুর ১২:৪৭। ১৯ জুন, ২০২৫।

জমে উঠেছে নওগাঁর সাপাহার আমের হাট, দাম কম

জুন ১৫, ২০২৫ ৯:৫১
Link Copied!

নওগাঁ প্রতিনিধি : ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ আম বাজার নওগাঁর সাপাহার আমের হাট। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন বেপারী, পাইকার এবং ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, ব্যানানা ম্যাংগো এবং এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত আম আম্রপালি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

যদিও জেলা প্রশাসন এবং কৃষি অধিদপ্তরের সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১৮ জুন থেকে বাজারে আসার কথা ছিল আম্রপালির। আবহাওয়া জনিত কারণে ফলন কম হওয়ায় এবং তীব্র গরমে আগেই আম পরিপক্ব হয়েছে বলে দাবি চাষিদের।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেজিতে আম ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হলেও মানা হচ্ছে না সেই নির্দেশনা। ৫২ কেজিতে নেওয়া হচ্ছে এক মণ। দাম এবং বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়েও ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

রোববার (১৫ জুন) নওগাঁর সাপাহার আমের হাট ঘুরে দেখা যায়, সাপাহার জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে শুরু করে সাপাহার-নজিপুর আঞ্চলিক সড়কের গোডাউনপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে বসেছে আমের হাট। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে দিনব্যাপী কেনাবেচা চলে এই হাটে। ভোরের আলো ফোটার আগে থেকে চাষিরা ভ্যান, ভটভটি এবং অটোরিকশায় ক্যারেট সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসছেন বিভিন্ন জাতের আম। ক্রেতারাও করছেন দরদাম। ব্যবসায়ী এবং পাইকাররা সিন্ডিকেট করে প্রশাসন থেকে কেজিতে আমি ক্রয় করতে বললেও ৫২ কেজিতে ১ মণ হিসেবে ক্রয় করছেন বলে অভিযোগ আম চাষিদের। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে এখন আমের চাহিদা নেই বলে বাজার কিছুটা দাম কম এবং লোকসানের মুখে আছেন বলে দাবি পাইকার, বেপারী এবং ব্যবসায়ীদের।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধে আইন পরিবর্তন করায় জাতিসংঘের উদ্বেগ

রোববার সাপাহার আমের হাটে প্রতি মণ হিমসাগর ১২০০-১৬০০ টাকা, ল্যাংড়া ৮০০-১৫০০ টাকা, নাক ফজলি ১২০০-১৫০০টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ২৮০০-৩৫০০টাকা, হাড়ি ভাংগা ১৫০০-২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০-৩২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজারে আম বিক্রি করতে আসা বিক্রেতা সাপাহার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আমচাষি শ্রী গোপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, অন্যের ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আম্রপালি আমের বাগান করেছি। এ বছর আমের দাম অনেক কম। গত বছর যে আম ৪০০০-৪৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি সে আম এ বছর ২০০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । এ দামে আম বিক্রি করে কীটনাশক খরচ ই উঠবে না।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ল্যাপটপসহ আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার

জেলার পত্নীতলা উপজেলার উত্তরামপুর গ্রাম থেকে আম বিক্রি করতে আসা আমচাষি মেরাজুল ইসলাম বলেন, আম বিক্রির আগে প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল কেজিতে আম বিক্রি হবে। কিন্তু বাজারে এসে দেখলাম বিক্রি হচ্ছে মণে, তাও আবার ৫২ কেজিতে এক মণ নেওয়া হচ্ছে। এমনিতেই এ বছর বাগানে আমের ফলন কম সঙ্গে দামও কম। তার ওপর যদি মণ প্রতি ১২-১৩ কেজি বেশি দিতে হয় তাহলে আমরা যাব কোথায়। এখন আমাদের বাগান কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপাই নেই।

শরীয়তপুর থেকে আম ক্রয় করতে আসা ব্যবসায়ী হারুণ সরদার বলেন, ৫-৬ বছর ধরে সাপাহারে আম কিনতে আসি। এ বছর মোকামে আমের চাহিদাই নেই। আম কিনতেছি ১০০ ক্যারেট নিচ্ছে ৫০ ক্যারেট৷ আমের চাহিদা না থাকায় বাজারে দাম কিছুটা কম। এ দামে আম কিনেও লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘আমাদের সন্তান সবচেয়ে সৌভাগ্যবান’, জন্মের আগেই বললেন হবু মা কিয়ারা

বাংলাদেশ ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাকিল হোসেন বলেন, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ৫২ কেজি নেওয়া হয়। ক্যারেটের সকল আম এক সাইজের হয় না। যার কারণে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কারও কাছ থেকে ৪৮ আবার কারও কাছ থেকে ৫০ কেজি নিয়ে থাকে। ওজন ৫২ তেই নির্দিষ্ট না।

সাপাহার উপজেলা আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন রিফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর তুলনামূলক ফলন কম হলেও আমের সাইজ অনেক ভালো হয়েছে। সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ী এবং বেপারীরা ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে এ বছর ৫-৬ হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী কেজিতে আম ক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং কানসাটের ব্যবসায়ীরা ৫০ থেকে ৫২ কেজিতেই মণ হিসেবে আম ক্রয় করছেন। যার কারণে এ বাজারে আম ক্রয় করতে আসা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। তাই ওজনের বিষয়টি যদি সারাদেশে একই রকম রাখা হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।