স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই সনদের ভিত্তিতে ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে জেলা জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন তারা।
এ সময় রাজশাহী সদর আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী ও হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী মো. নুরুজ্জামান লিটন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, সহকারী সেক্রেটারি মো. সিরাজুল ইসলাম এবং নগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. রফিকুল ইসলামসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি প্রদানের আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন।
বক্তারা দাবি করেন,“দীর্ঘদিন ধরে দেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ অনুপস্থিত। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করেই নতুন গণতান্ত্রিক সূচনা ঘটাতে হবে।”
তারা আরও বলেন,“বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন, অবিশ্বাস ও সংঘাতের রাজনীতি এখনো প্রবল। জুলাই সনদের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারে, যেখানে সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।”
‘নতুন বাংলাদেশ’-এর প্রত্যাশার বিষয়ে বক্তারা বলেন, “শেখ হাসিনার পতনের পর মানুষ ভেবেছিল দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হবে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এখনো ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, রাজনৈতিক হিংসা ও অব্যবস্থাপনা অব্যাহত রয়েছে।”
জামায়াতের নেতারা দাবি করেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনই দেশে স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পাবে, যা প্রকৃত গণপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।”
সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, “দেশের মানুষ আজ পরিবর্তন চায়। তারা আর একতরফা নির্বাচন, অদৃশ্য প্রভাব বা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ মেনে নেবে না। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতি ছাড়া আগামী নির্বাচন দেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না।”
তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশে একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় জনগণের গণআন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি ঘোষিত তাদের ‘জুলাই সনদ’-এ দেশের রাজনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য একটি নতুন রূপরেখা প্রস্তাব করেছে। এতে অন্তর্র্বতীকালীন নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা এবং পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব–এর বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দলটির দাবি, এই কাঠামো বাস্তবায়িত হলে রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব, পরিবারতন্ত্র ও দলীয়করণ কমে যাবে, এবং সংসদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের বাস্তব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।
রাজশাহী জেলা জামায়াতের নেতারা বলেন,“বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নতুন চিন্তার সময় এসেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই গণতন্ত্র গড়ে তোলা সম্ভব।”