অনলাইন ডেস্ক : আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮ জন ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯, ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮ প্রার্থীকে যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য পদে মোট ৪৬২ প্রার্থীকে যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আর ৪৭ জন রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ প্রার্থীর তালিকায়।
গতকাল রাত নয়টার পর ডাকসু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন পদে ১৫ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন, কমনরুম,রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৫ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদকে ১৯ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদকে ১১ জন, ক্রিয়া সম্পাদকে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদকে ৯ জন, সমাজসেবা সম্পাদকে ১৩ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদকে ১২ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদকে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদকে ১১ জন ও ১৩ টি সদস্য পদে ২১৫ জন প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে।
এর আগেরদিন বুধবার মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিলো। এদিন ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে । এছাড়াও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮টি হলে মোট ১ হাজার ১০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে এখন পর্যন্ত নয়টি প্যানেল ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে তার প্যানেল ঘোষণা করে। এর আগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে আরও ৮টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এদিকে ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যেকোনো
সেবামূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রত্যাশা জানিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেলের প্রার্থীরা। এছাড়াও ব্যালেটে প্রার্থদের ছবি সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা উমামা ফাতেমার:
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে ভিপি করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। প্যানেল ঘোষণা করেন ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা।
ঘোষিত প্যানেলের জিএস পদে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া। এজিএস পদে জাহেদ আহমদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সম্পাদক পদগুলোতে আছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক নূমান আহমাদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মমিনুল ইসলাম (বিধান), আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাফিজ বাশার আলিফ, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক সুমী চাকমা এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিদ হাসান।
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে রয়েছেন সিয়াম ফেরদৌস ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাদিকুজ্জামান সরকার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক মো. রাফিজ খান, সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর সামাদ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ইসরাত জাহান নিঝুম এবং মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে রয়েছেন নুসরাত জাহান নিসু।
এ ছাড়া সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নওরীন সুলতানা তমা, আবিদ আব্দুল্লাহ, ববি বিশ্বাস, মো. শাকিল, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), অর্ক বড়ুয়া, আবির হাসান, নেওয়াজ শরীফ আরমান, মো. মুকতারুল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, রাফিউল হক রাফি, মো. সজিব হোসেন ও সাদেকুর রহমান সানি।
পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশায় ছাত্রদলের প্যানেল:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরে বেশি ফোকাস থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের। এমনটাই জানিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ।
গতকাল মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। এসময় ছাত্রদলের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তারা বাহিরের হোস্টেল বা মেসে থাকলে প্রচুর পরিমাণে খরচ হয়। ফলে তাদের অনেক পরিবার আর্থিকভাবে সমর্থন দিতে পারে না। ফলে এসব শিক্ষার্থী ৪-৫টি টিউশন করে চলতে হয়। সারাদিন শুধু টিউশনের পেছনে সময় দিয়ে বেড়ায় শুধু বেঁচে থাকার জন্য। ফলে একাডেমিক পড়াশোনার জন্য সঠিকভাবে সময় দিতে পারেনা।
তিনি আরও বলেন, যখন একজন শিক্ষার্থীর ফলাফল ৩.৫০ এর নিচে নেমে যায়, তখন ভালো কোম্পানিগুলোর চাকরিতে আবেদন করতে পারে না। সুতরাং আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করে তাদের জন্য একটি মানসিক প্রশান্তি আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। যেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোভাবে থাকতে পারে এবং পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে।
আবিদুল ইসলাম বলেন, পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রচেষ্টা এবং ফোকাস থাকবে। এখানে আমরা চিরকালের জন্য থাকতে আসিনি। আমাদের একটি টেবিল ও মাথার ওপর ছাউনি দরকার শুধু। যাতে পড়াশোনা শেষ করে বের হয়ে দেশকে নেতৃত্বে দিতে পারি। আমাদের কোনো বড় বড় ভবন লাগবে না। আমার সামর্থ্য না থাকলে টিনের চাল দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করবো।
ব্যালটে প্রার্থীদের ছবি যুক্ত করার দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের:
ডাকসু নির্বাচনে নাম ও ব্যালট নম্বরের পাশে প্রার্থীদের ছবি যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।
বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে ৪১টি ভোট দিতে হবে। একজন ভোটারের পক্ষে এতো সংখ্যক প্রার্থীর নাম নাম ও ব্যালট নম্বর মনে রাখা কঠিন। তাই ব্যালট প্যাপারে অবশ্যই প্রার্থীদের স্পষ্ট ছবি দিতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে তারা তাদের সুবিধা অনুযায়ী ছবি বসাতে হবে। অর্থাৎ, তারা যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোদ করবে সেভাবেই তাদের ছবি ব্যালট প্যাপারে যুক্ত করতে হবে। প্রার্থীদের ছবি যুক্ত করা অতিব জরুরি নতুবা একই নামে দুজন প্রার্থীর মধ্যে ভোট দিতে গিয়ে ভোটাররা কনিফিউশনের মধ্যে পড়বে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ভিপি পদে নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা (জুলিয়াস সিজার) ডাকসুতে সহসভাপতি (ভিপি) পদে দাঁড়িয়েছে। তার মানে কি তার অতিতের ফৌজদারি অপরাধ মাপ হয়ে গেছে? সেসময় এই সিজার ভিপি নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেনের প্রচারণায় ডিম ছুঁড়েছিল। পাশাপাশি নারীদেরও লাঞ্চিত করেছে ছাত্রলীগের এই নেতা।
সেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ডাকসু প্রার্থীরা:
আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে কোন সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। গতকাল ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী/পক্ষ আজ থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কোনো ধরনের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারবেন না, কোনো ধরনের উপঢৌকন বিলি-বণ্টন করতে পারবেন না, এমনকি আপ্যায়ন করানো, অর্থ সহযোগিতা করা কিংবা অনুরূপ কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন না। এ ধরনের কার্যক্রম সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ আগস্ট দুপুর একটা পর্যন্ত। আর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ২৬ আগস্ট বিকাল ৪টায়। ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর।-ইত্তেফাক