নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা মঙ্গলবার। রাত ১২:৫৯। ১৫ জুলাই, ২০২৫।

তানোরে গ্রামে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ইরানীদের হাতে নির্মিত ভাগনা মসজিদ

জুলাই ১৪, ২০২৫ ৫:৩৯
Link Copied!

সাইদ সাজু, তানোর : রাজশাহীর তানোর উপজেলার ঐতিহ্য ও ইরানী কারিগরদের হাতে নির্মিত মনোমুগ্ধকর ঐতিহাসিক ভাগনা মসজিদ। এখনো শৈল্পিক সৌন্দর্যে মন কাড়ে এলাকাবাসীর। ঐতিহাসিক এই মসজিদ নিয়ে এলাকায় রয়েছে যেমন কল্পকাহীনি তেমন এর মুগ্ধতা ছড়িয়ে মাথা উঁচু করে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে এই মসজিদটি। তানোর উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিক সরনজাই ইউপির ভাগনা সিধাইড় মসজিদ।

রাজশাহী জেলার উত্তর-পশ্চিম কোণে প্রায় ৩০ কিলো মিটার দূরে শিবনদী এবং বিলকুমারীর পশ্চিমপাড়ে বরেন্দ্র ভূমির প্রাণকেন্দ্র তানোর উপজেলা। তানোর থানা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয় ১৯৮৩ সালে। তানর হতে ‘তানোর’ শব্দটির উদ্ভব। তানর অর্থ তান-রহিত অর্থাৎ জীবন স্পন্দনহীন, নিস্প্রভ ও নিরানন্দ জনপদ। পুরাকালে গাছপালাহীন মরুপ্রায় এ অঞ্চলে জনপদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। কালের আবর্তে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আজকের এ জনপদ।

‘তানোর’ বর্তমানে একটি শস্য শ্যামল খাদ্য ভান্ডার যা গোটা বাংলাদেশের খাদ্য চাহিদা পুরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এখানকার ধান ও অন্যান্য ফসলাদি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পৌঁছে যায়। প্রাচীনকালে মানুষের বসবাস কম থাকলেও এখানেও রয়েছে প্রাচীন অনেক স্থাপনা। তানোর উপজেলায় রয়েছে জমিদার বাড়ি, মাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ প্রাচীন বেশ কিছু স্থাপনা।

আরও পড়ুনঃ  স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির স্মারকলিপি, রাজশাহীর উন্নয়নে ৩৮ দফা দাবি

এগুলোর মধ্যে কালের সাক্ষী হয়ে এখনও মাথা উচিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়নের শিধাইর ভাগনা গ্রামে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী ভাগনা মসজিদ। মসজিদটি আসলে কবে কে নির্মাণ করেছেন তার সুস্পষ্ট তথ্য স্থানীয়রা বলতে পারেন না। ইতিহাসেও এর স্পষ্ট কোন তথ্য নেই তানোর উপজেলার উইকিপিডিয়ায়। গ্রামের মানুষজন সাধারণত বলে তাদেরই কোন পূর্ব পুরুষ এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মসজিদটি এলাকাবাসীর মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসছে এবং জুম্মার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়।

তবে ধারণা করা হয়, ১২২০ হিজরী থেকে ১২২৬ হিজরীর দিকে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ১১ শতক জায়গা নিয়ে নির্মিত ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের আয়তাকার মসজিদটির প্রাচীর জুড়ে প্রাচীন কারুকাজের লতাপাতা, ইসলামী ঐতিহ্যর টেরাকোটা। যা যে কারও মন জুড়িয়ে দিবে। মসজিদটির এক সারিতে তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট ফারসি লেখার ছাপ রয়েছে। উক্ত লেখায় নির্মাণদাতাদের নামসহ বলা হয়েছে আমার পবিত্র হাত দ্বারা ভিট গাথিয়া নির্মাণ করিলাম আপনারা জমায়েতের সহিত নামাজ পড়বেন। গম্বুজের শীর্ষবিন্দু ক্রমহ্রাসমান বেল্টযুক্ত চারকোণে রয়েছে স্তরযুক্ত ও নকশা খুচিত বেল্ট করা চারটি চিকন মিনার।

আরও পড়ুনঃ  বাগমারায় ড. মুহাম্মদ আবদুল মুমীত এঁর "ঘটনাবহুল ৩৬ জুলাই" গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

মসজিদের সামনের দেয়ালের মধ্যে দরজার দুপাশে গম্বুজের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে আরো দুটি ক্ষুদ্র মিনার। মিনারগুলো দেয়াল সংযুক্ত বর্গাকার। একইরকম আরও দুটি ক্ষুদ্র বর্গাকার মিনার আছে মসজিদটির পশ্চিম দেয়ালে। মসজিদের ভেতরে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি মাঝারি আকৃতির দরজা। দরজা তিনটিতে রয়েছে ছাদ ও দরজার উপরিভাগে মধ্যস্থানে রয়েছে নকশা। এখানে নির্দিষ্ট কোন মেহরাব নেই। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে প্রাচীন নকশা এবং অন্তঃপ্রকৃতির এক দরজার নকশা খঁচিত শিল্প সৌন্দর্যের অপূর্ব লতা-পাতায় পরিপূর্ণ।

মসজিদটি নির্মাণ সম্পর্কে ফারসি ভাষায় লেখা একটি কালো ফলক রয়েছে মাঝের দরজার উপরিভাগে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ব্রিটিশ আমলের রাজত্বকালে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধরা হয়। উক্ত লিপি অনুযায়ী বোঝা যায় মসজিদের নির্মাণে কাজ করেছিল ফরাসি বা ইরানের কারিগররা। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে এক সময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটির ব্যাপক ফাটল ধরলে মসজিদের ভেতরের মধ্যস্থানে ২টি পিলার নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে গ্রামটির মুসল্লিগন বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদটির পূর্ব পার্শ্বে জায়গা বাড়ানো হয়েছে। সারা বছরই বিভিন্ন এলাকার লোকজন মসজিদটি দেখতে আসেন ও নামাজ আদায় করেন।

আরও পড়ুনঃ  ফেসবুকে ভাইরাল ‘এনসিপি’র মঞ্চে আ’লীগ নেতা’, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

বিভিন্নসময় এলাকাবাসীর উদ্যোগে সংস্কার ও রং করার কারণে এর প্রাচীন রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় যদি সংস্কার কাজ করা হয় তাহলে এই দর্শনীয় প্রাচীন মসজিদটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠার পাশাপাশি ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রক্ষা হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।