অনলাইন ডেস্ক : জাতি সংকটে পড়লে কেউ দায় এড়াতে পারবো না। সেই দায় তৈরি হওয়ার আগেই ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের প্রতি আস্থা রেখে সহযোগিতা করার জন্য সব দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার, আমাদের সরকার। তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) তো জোর করে ক্ষমতা নেননি। তাহলে কেন আমরা তাকে বাধ্য করতে যাব? তিনি তো আমাদের প্রতিপক্ষ না। আমরাই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। সব দলের দ্বারা সমর্থিত তিনি এখন সরকারের অভিভাবক। তাই আমাদের দায়িত্ব সার্বিক কাজে সহযোগিতা করা।
শনিবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ড. ইউনূস একাধিকবার বলেছেন এ বছরে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে চান। বারবার বলেছি তার এই কথার ওপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। আস্থা রেখে আমাদের জন্য সুবিধাজনক সময় কি হতে পারে সেটা ফ্লেক্সিবলি বলেছি। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমরা কোনো ধরনের অসহযোগিতা করিনি বরং আমাদের পক্ষ থেকে যখন যা করা দরকার বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করেছি।
তিনি আরও বলেন, এ সরকার যেহেতু জনগণের সরকার, আমাদের সবার সরকার, সেজন্য আমি সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন আমরা মিলে তাকে সহযোগিতা করি। সরকারও যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সহযোগিতা গ্রহণ করেন, সমস্যা যাই সামনে আসুক সমাধান তার অতি সহজ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এখানে যদি বোঝাপড়ায় ঘাটতি তৈরি হয় আর এজন্য যদি দেশ জাতি সংকটে পরে এর দায় আমরা কেউ এড়াতে পারবো না। সুতরাং দায় সৃষ্টির আগেই সমাধানের পথে হাঁটা বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আসুন প্রিয় দেশকে জাতিকে আমরা আশাবাদী করি এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
জামায়াতে ইসলামী আমির বলেন, সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে অনেক কিছু হয়ে গেল। আমরা আশা করছি সামনে আর এই বিষয়টা বাড়বে না। আরও দুটি স্পর্শকাতর বিষয় আলোচনায় আছে। একটি হচ্ছে মানবিক করিডর। আমরা সর্ব প্রথম বলেছি, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে হুট করে কোনো কিছু করা যাবে না। এখন দেশে পার্লামেন্ট নেই। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। পার্লামেন্টের বিকল্প হতে পারতো দেশের দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা। রাজনীতির সব পক্ষের সঙ্গে না বসে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। আমরা আশা করছি সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব দেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর দেশের বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ নির্ভর করে। এ ধরনের বিষয়ে সরকারের হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন ডা. শফিকুর রহমান।
সেনাবাহিনী বিতর্কিত হলে দেশের জন্য ক্ষতি হবে উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, কারো কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা চাই না। আমরা চাই সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হোক তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়ে যেতে থাকুক। এতে দেশেরও গৌরব সেনাবাহিনীরও গৌরব। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে সেই গৌরবের জায়গায় রাখতে চাই। আর এই জায়গায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না সে আশা রাখতে চাই।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে যেকোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করলে একটা স্বাধীন দেশ যেকোনো ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমরা সেসব বিতর্ক থেকে গর্বিত সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখতে চাই৷
আমরা আশা করি এ বিষয়টি আর বাড়বে না। সুতরাং যার যার অবস্থান থেকে সার্বিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করা উচিত বলা মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যারা এখানে এসেছেন তৃণমূলের নেতৃত্ব আপনারা দিয়ে থাকেন। আমাদের প্রত্যেকটি সদস্যকে এখন দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের দ্বারা সমাজের সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলার কোনো হানি হয়, শান্তি বিনষ্ট হয়, আমাদের একজন সমর্থকও যেন সে কাজে জড়াতে না পারে এ ব্যাপারে সদস্যদের প্রতি আন্তরিক দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
জনপ্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জামায়াত অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে উল্লেখ করেছে জামায়াতে ইসলামী আমির বলেন, আমাদের আরও অনেক ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা সবকিছুর বিনিময়ে চাই আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধান, যে বিধান সমস্ত মানুষ নয় সমস্ত সৃষ্টির কল্যাণে নাযিল করা হয়েছে। সেই বিধানের মাধ্যমে আগামী বাংলাদেশের ফায়সালা হোক সেটাই আমরা চাই।
এ সময় দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদসহ দলটির মজলিসে শূরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।