নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা মঙ্গলবার। রাত ২:০১। ২৪ জুন, ২০২৫।

দেশের ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলায় শুরু হচ্ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি

জুন ২৩, ২০২৫ ৪:০৮
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : দেশের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলায় চালু হতে যাচ্ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। এর মধ্যে ১৩৫টি উপজেলা অতি উচ্চ বা উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ, যেখানে একসঙ্গে শিক্ষা ও পুষ্টি সংকটে রয়েছে। বাকি ১৫টি উপজেলা অপেক্ষাকৃত নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত।

এই কর্মসূচির আওতায় ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত হবে।

স্কুল ফিডিং কর্মসূচিটি আগামী জুলাই থেকে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি কোনো কারণবশত নির্ধারিত সময়ে শুরু করা না যায় তবে আগস্ট থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

গত ২১ জুন, শনিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্মসচিব ও স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসূচীটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফর্টিফাইড বিস্কুট, ইউএইটটি মিল্ক, বনরুটি, সিদ্ধ ডিম, কলা ও স্থানীয় মৌসুমি ফল প্রদান করা। সপ্তাহের রোববারে বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম, সোমবার বনরুটি ও ইউএইচটি দুধ, মঙ্গলবার বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম, বুধবার ফর্টিফাইড বিস্কুট ও কলা বা স্থানীয় মৌসুমি ফল এবং বৃহস্পতিবার বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম প্রদান করা হবে।

আরও পড়ুনঃ  রোববার রাতে চীন যাচ্ছে বিএনপি প্রতিনিধি দল

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের আট বিভাগের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

উপজেলাগুলো হল-ঢাকা নবাবগঞ্জ, গাজীপুর সদর ও টংগী, নরসিংদী সদর, বেলাবো, মনোহরদী, পলাশ, রায়পুরা, শিবপুর, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, ভৈরব, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী ও তারাইল, নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও ঘিওর, টাঙ্গাইলের সখীপুর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দি, ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, চরভদ্রাসন, নগরকান্দা ও সালথা, মাদারীপুর সদর, ডাসার, কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর, শরীয়তপুর সদর, গোসাইরহাট ও জাজিরা, কুমিল্লার বরুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও নাসিরনগর, চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর, ফেনীর সোনাগাজী, নোয়াখালীর সূবর্ণচর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাঙামাটির বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, পাবনার বেড়া, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, নাটোরের গুরুদাসপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও শিবগঞ্জ, নওগাঁর বাদলগাছি, জয়পুরহাটের কালাই, যশোরের অভয়নগর, ঝিকরগাছা ও কেশবপুর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, নড়াইলের কালিয়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, মাগুরার শ্রীপুর, খুলনার পাইকগাছা, বাগেরহাটের শরণখোলা, ঝিনাইদহের শৈলকূপা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, মুলাদী ও উজিরপুর, ঝালকাঠির কাঠালিয়া ও নলছিটি, পিরোজপুর সদর, ইন্দরকান্দি, কাউখালী, মঠবাড়িয়া ও নেছারাবাদ, ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, মনপুরা ও তজুমুদ্দিন, বরগুনার তালতলী, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জের বাহুবল, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর, ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, শাল্লা ও শান্তিগঞ্জ, ময়মনসিংহের ফুলপুর, ধুবাউড়া, গৌরীপুর, হালুয়াঘাট ও ঈশ্বরগঞ্জ, জামালপুরের বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ি, শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ি, নেত্রকোণা সদর, আটপাড়া, বারহাট্টা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুড়ী, মদন ও মোহনগঞ্জ।

আরও পড়ুনঃ  ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৫১ জন হাসপাতালে ভর্তি

ইতোমধ্যে উভয় প্রকল্পের জন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হবে, যারা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে পাঁচ দিন শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা খাদ্য পাবে। শিক্ষার্থীদের একটি করে সিদ্ধ ডিম, ১২০ গ্রাম ওজনের বনরুটি, ২০০ মিলিলিটার ইউএইচটি দুধ, ৭৫ গ্রাম ওজনের একটি বিস্কুট ও ১০০ গ্রাম ওজনের একটি কলা অথবা স্থানীয় মৌসুমি ফল দেওয়া হবে। প্রস্তাবিত খাদ্য তালিকায় মোট এনার্জির ২৫ দশমিক নয় শতাংশ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ৩২ দশমিক দুই শতাংশ, প্রোটিনের ১৬ দশমিক চার শতাংশ ও ফ্যাটের ২১ দশমিক সাত শতাংশ সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়ানো, ঝরে পড়া রোধ করা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা হ্রাস ও শিক্ষায় মনোযোগ ধরে রাখা। একইসঙ্গে এটি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের।

আরও পড়ুনঃ  বাবা-মায়ের ইচ্ছে পূরণে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেছেন, ‘স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে ডিম, বনরুটি ও কলার মতো খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক পরিবার আর্থিক অক্ষমতার কারণে এসব প্রয়োজনীয় খাদ্য তাদের সন্তানদের দিতে পারে না। তাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো, শিশুদের দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে ধরে রাখা, দুপুরে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করা এবং অপুষ্টির প্রতিকার করা।’

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)’র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথম স্কুল ফিডিং কর্মসূচির সূচনা হয়ে তা ২০১০ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। এরপর ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় আরো একটি পৃথক স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু ছিল, যার আওতায় শিক্ষার্থীদের শুধু উচ্চমানসম্পন্ন বিস্কুট সরবরাহ করা হতো। নতুন প্রকল্পটি আগের চেয়ে আরও উন্নত ও পুষ্টিনির্ভর এবং এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।-বাসস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।