স্টাফ রিপোর্টার : পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, রাজশাহী-নাটোরের ওপর দিয়ে প্রবহমান বড়াল নদীর প্রাণ প্রবাহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, বড়ালের ১৮ কিলোমিটার এলাকায় পানি প্রবাহ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।
সোমবার ( ১৯ মে) রাজশাহীর চারঘাটে বড়াল নদীর উৎস মুখ পরিদর্শনে এসে পানি সম্পদ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বড়ালের উৎস মুখে চারঘাট স্লুইসগেটটি সরিয়ে ফেলা হলে সমাধান হবে কিনা, বড়ালে পানির প্রবাহ আসবে কিনা তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং এর সাথে আটঘরিয়ার দিকে যুক্ত বড়াল নদীর আরও ১৮ কিলোমিটার খনন করে এ নদীর প্রবাহ আনা যাবে কিনা সেটির কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, নদীর প্রবাহ হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য, মানুষকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। নদীর প্রবাহ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হয়তো কিছু কিছু জায়গায় করতে হয় কিন্তু নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যদি নদীটাই মরে যায় তাহলে তো এটি মেনে নেয়া যায় না।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে বড়াল নদীর কতটুকু আমরা ফেরত পেতে পারি সেজন্য কি পরিকল্পনা হতে পারে সেটা পানির উন্নয়ন বোর্ড ঠিক করবে। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বার্তা হচ্ছে নদীটিকে একটা প্রাণ ব্যবস্থা প্রাকৃতিক সিস্টেম হিসেবে দেখেই পরিকল্পনা করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশনসহ নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে সমন্বয় করে একটা ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনা করতে উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, বড়াল নদী প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কর্মপরিকল্পনা যেন আমরা চূড়ান্ত করে যেতে পারি সেই চেষ্টাটা অব্যাহত থাকবে, বাকি কাজটুকু পরবর্তী সরকার এসে করবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানতে হবে কোথায় তাকে মানুষের কথা শুনতে হবে, কারণ এই প্রকল্পগুলো তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে করা হয়নি, এগুলো জনগণের স্বার্থে। জনগণই যদি এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তারা যদি বলে এটি পর্যালোচনা করতে হবে, পরিমার্জিত করতে হবে, তাহলে তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ যেটি চায় সেটিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
বেআইনি বালু উত্তোলন ও কৃষিজমির উপরের মাটিকাটা চরম পর্যায়ে চলে গেছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ৬৪ জেলার ডিসি এবং এসপিদের কে বালুর উত্তোলন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং গত সপ্তাহে তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে তাদেরকে এ বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং আমরা সমগ্র দেশের জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে মনিটর করছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ফারাক্কার পানি বন্টন চুক্তিটির মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এই চুক্তির অধীনে দুই দেশের একটি টেকনিক্যাল কমিটি নিয়মিতই মাঠ পর্যায় হতে তথ্য উপাত্ত নিচ্ছে, ফলে চুক্তিটা নবায়ন করার ক্ষেত্রে তথ্য উপাত্ত যা দরকার তা কিন্তু নিয়মিত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটা আমাদের ন্যায্য হিস্যা, এটার জন্য আমরা আমাদের অধিকারের জায়গা থেকে কথা বলবো। আমাদের হাতে আরও দেড় বছর সময় আছে, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।
পরে উপদেষ্টা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘরিয়া নামক স্থানে বড়াল নদীর ওপর নির্মিত ৫ ভেন্ট রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শন করেন।
এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তর-পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. মুখলেসুর রহমান, নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোবাশ্বেরুল ইসলাম, রাজশাহী পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী, নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।