স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে প্লাস্টিকমুক্ত কৃষি উপকরণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৪ জুন) জেলার পবা উপজেলার বিলনেপালপাড়া গ্রামে এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় কৃষিপ্রতিবেশ কেন্দ্র এবং উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক। মেলায় পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ জন কৃষক ও কৃষাণি তাঁদের ব্যবহৃত কৃষি উপকরণ প্রদর্শন করেন এবং নতুন প্রজন্মকে সেগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল-প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা এবং প্লাস্টিকমুক্ত পরিবার গড়ে তোলা।
মেলায় কৃষক-কৃষাণিরা যেসব প্লাস্টিকমুক্ত কৃষি ও গৃহস্থালি উপকরণ প্রদর্শন করেন তার মধ্যে ছিল-মাথল, থলে, মাছ ধরার সাত ধরনের সরঞ্জাম, গুমাই, সাব্বল, দাউলি, বেকি, কাতা, লিহান, ছুরি, কুপা, দা, কাঁচি, হাসা, ছোট-বড়-মাঝারি ডালি, নানা রকম কুরা, বিভিন্ন ধরনের নিড়ানি, ডউু, কারোল, শিকা বাহুক, আম নামানোর ঝোপা, কাড়ল, পানি সেত টবকা, ধান মাপার হাটা, খই চালা চালন, ঝাঁকা, সাজি, সরপেস, চাল ঝাড়ার কুলাসহ নানা কিছু।
মেলায় এসে স্থানীয় প্রবীণ কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘একসময় ঘরে প্লাস্টিক ছিল না, ছিল মাটির হাঁড়ি-কলস, পিতলের থালা। বাজারে গেলে সঙ্গে থাকত কাপড়ের তৈরি ব্যাগ। এমনকি কারও বাড়িতে বেড়াতে গেলেও পকেটে করে কাপড়ের সেলাই করা থলে নিয়ে যেতাম। এখন তো ঘরে-বাইরে সবখানেই প্লাস্টিক। এখন শুনি, প্লাস্টিক নাকি আমাদের ক্ষতি করে, এমনকি ক্যানসারও হয় এর কারণে।’
তিনি বলেন, ‘একসময় নিড়ানি ছিল সাত-আট রকমের। যেমন-‘চাচানি’ দিয়ে পটল, করলা জাতীয় লতানো সবজিতে নিড়ানি দেওয়া হয়। ‘আঁকা’ দিয়ে পেঁয়াজ-রসুনে, ‘ভুকচা’ দিয়ে জমির ঘাস তুলি, ‘বেকি’ দিয়ে রসুন তোলাই। কোদালও বিভিন্ন রকমের। যেমন, ‘কামরি কোদাল’ দিয়ে বেশি পরিমাণে মাটি খোড়া যায়, ‘চিকন কোদাল’ আলুর জমিতে ব্যবহার করি। আবার ‘চায়না কোদাল’ সরু ড্রেন তৈরিতে উপযোগী।’
আরেক কৃষক লুৎফর রহমান (৫৫) মেলায় নিয়ে এসেছিলেন ১৮ ধরনের কৃষি উপকরণ। এর মধ্যে ছিল দুই ধরনের মাথল। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে ‘পইচা মাথল’ ব্যবহার করি, আর রোদে ‘দেশি মাথল’–এটা সবসময়ই কাজে লাগে।’
কৃষাণি হিরামনি মেলায় এনেছিলেন দুই ধরনের কুলা, রুটি তৈরির বেলুন, লাকড়ি, হাতুড়, দাউলি, বেকি, তিন ধরনের বটিসহ আরও নানা কিছু। তিনি বলেন, ‘কুলা দিয়েও আলাদা আলাদা কাজ হয়। কিছু দিয়ে ধানে বাতাস দেওয়া হয়, কিছু ঝাড়াইয়ের কাজে, আবার কিছু কুলা চাল ঝাড়ার কাজে ব্যবহার করি।’
মেলায় অংশ নিয়ে মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো-ঘরে, মাঠে, কৃষিকাজে আর কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার না করা। আমরা চাইলে পারি প্লাস্টিক বাদ দিয়ে চলতে।’
মেলায় প্লাস্টিকমুক্ত মেলার ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, পোকামাকড় ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে। মাইক্রোপ্লাস্টিক ফসলের মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নদী-জলাশয়েও এটি পৌঁছে জলজ পরিবেশকে বিষিয়ে তোলে। বর্তমানে ফলের বাগান, মালচিংসহ কৃষিক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। এটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই সতর্ক হতে হবে এখনই।’