সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উদযাপন করা হয়েছে। আজ অক্টোবর মাসের ২য় শনিবার বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে রাজশাহীর পদ্মাপাড়, সিমলা পার্ক এলাকায় বিকাল ৪ টায় পাখির প্রতি ভালোবাসা শীর্ষক পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাইকেল র্যালী ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহীর গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক, সবুজ সংহতি, ০.৬ গ্রাভিটি রাইডার্স ও সেভ ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড নেচার এর যৌথ আয়োজনে এই সাইকেল র্যালী ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পথসভায় বক্তারা বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পরিযায়ী পাখির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পরাগায়ন, বীজ বিস্তার ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ কৃষি ও পরিবেশ দু’য়েরই উপকারে আসে। এক অর্থে, পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি একটি অঞ্চলের পরিবেশগত স্বাস্থ্যের সূচক। তবে আজ এই প্রাকৃতিক দূতেরা মারাত্মক হুমকির মুখে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) ও Convention on Migratory Species (CMS) -এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় প্রতি পাঁচটি পরিযায়ী প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে, আর প্রায় অর্ধেকের বেশি প্রজাতির জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস, নির্বিচারে বৃক্ষ হত্যা, বন উজাড়করণ, জলাভূমি ধ্বংস, আলোক দূষণ, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন। রাজশাহীর সিমলা পার্কে এখন পর্যন্ত ২০০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৪ প্রজাতির সরিসৃপ এবং ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে যার মধ্যে কিছু কিছু প্রজাতি শুধুমাত্র এই সিমলা এলাকাতেই পাওয়া গেছে, কিছু প্রজাতি বিপন্ন, কিছু প্রজাতি অতি বিপন্ন। রাজশাহীতে বৃক্ষ ও পুকুর হত্যা বন্ধ করা এবং রাজশাহীর সিমলা পার্কসহ সমগ্র পদ্মাপাড় ও চরকে বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য ঘোষণা করার জোড় দাবী জানানো হয়।
বক্তারা আরো বলেন, দেশে এত আইন রয়েছে কিন্তু নেই তার প্রয়োগ। মানুষ হত্যা যদি অপরাধ হয় হত্যাকারীর বিচার হয় তাহলে এই গাছ হত্যাকারী, পুকুর হত্যাকারী, পরিবেশ হত্যাকারীর বিচার কেন হবে না?
পথসভায় ৬ দফা দাবী জানানো হয়। দাবীগুলো হলো- রাজশাহীর সিমলা পার্কসহ সমগ্র পদ্মাপাড় ও চরকে বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে হবে। এসব এলাকায় সাউন্ড বক্সের ব্যবহার, আলোর ব্যবহার এবং সকল ধরণের প্লাস্টিক পন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল যেমন- খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর, জলাশয় উন্মুক্ত এবং দখলমুক্ত করে রাখতে হবে;পরিযায়ী পাখির শিকার সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করাসহ তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারেন্ট জালের ব্যবহার ও উৎপাদন সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করতে হবে; রাজশাহীর চলমান বৃক্ষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। শহরের অবশিষ্ঠ গাছগুলোকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ২৩ ধারার বিধান অনুযায়ী বিভিন্ন পাখির আবাসস্থল হিসেবে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; নগরীর পুকুর হত্যা বন্ধ করতে হবে। একই পুকুর বারবার ভরাট করার পায়তারা যারা করছে তাদের দ্রুতই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; রাজশাহী বিভাগের পুকুর, ডোবা, খাল-খাড়ি, বিল, নদ-নদীর পাড়ে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ও স্থানীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করতে হবে এবং সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইয়্যাসের সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ-বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ওয়ালিউর রহমান বাবু, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর আরটিই ভোলেন্টিয়ার জারিফা জান্নাত, সেভ ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড নেচার এর সভাপতি মো. ইমরুল কায়েসসহ প্রমুখ।