নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বুধবার। দুপুর ১:১৬। ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫।

বেনাপোল স্থল বন্দরে আটকা ভারতীয় ট্রাক তিন মাস পর তল্লাশিতে মিললো অবৈধ পণ্যের ভাণ্ডার

ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫ ১২:০৯
Link Copied!

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোল স্থলবন্দরে আটক তিন মাস পর থাকা একটি সন্দেহজনক ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ ঘোষণাবহির্ভূত, কাগজপত্রবিহীন ও নিষিদ্ধ পণ্য উদ্ধার করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে ঘোষণার তুলনায় ট্রাকটিতে অর্ধেকেরও কম পণ্য পাওয়ায় বাকি পণ্য কোথায় গেল-তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ও গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে এই তল্লাশী।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১টা ২০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত নিলাম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেনাপোল স্থলবন্দরে আটক ভারতীয় ট্রাকটির (নম্বর: এইচআর-৩৮-ইউ-২৪৮২) পণ্য পরীক্ষা করা হয়।

কাস্টমস সূত্র জানায়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘রাইসা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল’ গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাকটি বেনাপোল বন্দর কার্গো টার্মিনালে প্রবেশ করায়। সে সময় গেট পাসে ২২৯ প্যাকেজ বডি স্প্রে আমদানির ঘোষণা দেয়া হলেও ট্রাকটি স্কেল কার্যক্রম সম্পন্ন না করে রাজস্ব ফাঁকির উদ্দেশ্যে পণ্য পাচারের চেষ্টা করে।

গোয়েন্দা সংস্থার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ট্রাকটি আটক করে এবং পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেটি সিলগালা করে রাখে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক বা কোনো সিএন্ডএফ এজেন্ট পণ্য ছাড়করণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল না করায় কাস্টমস আইন অনুযায়ী ট্রাক বোঝাই পণ্য নিলামযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং মানব সভ্যতার অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ’- রুয়েট উপাচার্য

সোমবার পরিচালিত তল্লাশিতে ঘোষণাকৃত বডি স্প্রের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভারতীয় ওষুধ ও ওষুধ সামগ্রী, শাড়ি ও থ্রি-পিস, চাদর, জর্দা, আতশবাজি (পটকা), ফেসওয়াশ, ট্রিমারসহ বিভিন্ন কসমেটিক ও ভোগ্যপণ্য উদ্ধার করা হয়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, জব্দকৃত ওষুধ ও জর্দা বিধি অনুযায়ী ধ্বংস করা হবে। শাড়ি ও থ্রি-পিস প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করা হবে এবং বডি স্প্রে ও ট্রিমার নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।

তবে ট্রাকটিতে ঘোষণার তুলনায় প্রায় অর্ধেক পণ্য কম পাওয়া যাওয়ায় বাকি পণ্য সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিএন্ডএফ কর্মচারী জানান, ট্রাকটি প্রথমে সম্পূর্ণ পণ্যে ভর্তি ছিল। ট্রাকের পেছনের দুইটি তালার স্থানে কাটার ও পুনরায় ঝালাই করার চিহ্ন রয়েছে। তার দাবি, দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকার সুযোগে আমদানিকারকরাই অসদউপায়ে পণ্য বের করে নিয়ে আবার তালার স্থল ঝালাই করে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাংশের যোগসাজশ থাকার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  কেরানীগঞ্জে বহুতল ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ১৪ ইউনিট

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাকটি ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ভেহিকেল ইয়ার্ডে প্রবেশের পরপরই গুঞ্জন ওঠে-ট্রাকটি রেখে চালক ও হেলপার ভারতে পালিয়ে গেছে। এতে শুরু থেকেই ট্রাকটিতে অবৈধ বা ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য থাকার সন্দেহ আরও জোরালো হয়। স্থানীয়দের প্রশ্ন, অবৈধ পণ্যের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার আশঙ্কাতেই কি তারা পালিয়ে যায়?

দেশের সর্ব বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের মতো একটি কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় কীভাবে কাগজপত্রবিহীন ও নিষিদ্ধ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করল-তা নিয়েও উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। স্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ সদস্যদের মতে, বিজিবি, বন্দর ও কাস্টমসের অনুমোদন ছাড়া কোনো ট্রাক বন্দরে ঢোকার সুযোগ নেই। তাহলে এই ট্রাকটি কীভাবে দেশে প্রবেশ করল, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি।

এ বিষয়ে কাস্টমস কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া পণ্য তল্লাশী অভিযানে থাকা কাস্টম কর্মকর্তারা-সংবাদকর্মীদের তথ্য না দিয়ে চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, “আমরাই প্রায় ৩ মাস আগে ট্রাকটি আটক করে কাস্টমসকে অবহিত করেছি। ট্রাকে কী পণ্য রয়েছে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব কাস্টমস কর্তৃপক্ষের।”

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার ১১

উল্লেখ্য, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভুয়া বা জাল কাগজপত্রে ঘোষণাবহির্ভূত ও চোরাচালানি পণ্য আমদানির অভিযোগ নতুন নয়। এর ফলে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এর আগে আমদানিকৃত পণ্যের আড়ালে ভারতীয় মদ, ফেনসিডিল ও নিষিদ্ধ পণ্য উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি বেনাপোল বন্দর থেকে ছাড়ের পর প্রায় আড়াই কোটি টাকার চোরাচালানি পণ্য আটক হওয়ার ঘটনায় বন্দরের দুইজন আনসার কমান্ডার চাকরি হারান।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, কাস্টমস ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ জড়িত না থাকলে এভাবে কাগজপত্রবিহীন পণ্য ট্রাকে করে দেশে প্রবেশ এবং দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকার সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।