নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকা শুক্রবার। সকাল ১০:৩৬। ২৫ জুলাই, ২০২৫।


Girl in a jacket

ব্রহ্মপুত্রে চীনের মেগা-বাঁধ, বাংলাদেশ-ভারতের উদ্বেগ কেন?

জুলাই ২৩, ২০২৫ ৮:৩৬
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : হিমালয়ের পাদদেশের তিব্বতে এমন এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে চীন; যাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বলে দাবি করা হচ্ছে। এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যয় হবে ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নির্মাণ কাজ শেষে যুক্তরাজ্যের সারা বছরের বিদ্যুতের চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র চীনেরই থ্রি গর্জেস বাঁধকেও ছাড়িয়ে যাবে এই প্রকল্প। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং গত শনিবার এই বাঁধের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির নির্মাণ ও প্রকৌশল খাতে শেয়ারের দাম বেড়ে যায়।

বেইজিংয়ের কাছে এই প্রকল্পটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, কর্মসংস্থান এবং মন্থর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু ভাটির অঞ্চলে থাকা প্রতিবেশীদের জন্য এটি পানি নিরাপত্তার পুরোনো উদ্বেগকে আবারও জাগিয়ে তুলছে। কারণ তিব্বতের যে নদীতে এই বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, সেই ইয়ারলুং জাংবো নদী ভারতে ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশেও একই নামে প্রবাহিত হয়েছে। দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদের ওপর নির্ভরশীল।

চীনের এই প্রকল্পে ইয়ারলুং জাংবো নদীর ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে পাঁচটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে নদীটি তিব্বত মালভূমি থেকে প্রায় ২ হাজার মিটার উঁচু থেকে নিচে প্রবাহিত হয়েছে। ২০৩০-এর দশকের প্রথম ভাগ থেকে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পে প্রথম দফায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে চীন এই প্রকল্পের ব্যয় ও সম্ভাব্য সময়সীমা ছাড়া বাঁধ কীভাবে নির্মাণ করা হবে, সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি।

আরও পড়ুনঃ  গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া

• প্রতিবেশীরা উদ্বিগ্ন কেন?
তথ্যের ঘাটতি ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে পানির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলছে। কারণ সেচ, জলবিদ্যুৎ ও পানীয় জলের জন্য ব্রহ্মপুত্রের ওপর এই দুই দেশ ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এই বাঁধের কারণে রাজ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ভাটিতে অবস্থিত আসাম রাজ্যসহ আশপাশের এলাকাও প্লাবিত হতে পারে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলারের মতে, কেবল পানি নয়, বাঁধটি নদীর সঙ্গে বয়ে আসা পলিমাটিও কমিয়ে দেবে। এই পলিমাটি ভাটির দিকের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বহন করে।

১৯৬০-এর দশকে এই অঞ্চলেই ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ হয়েছিল এবং বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে চীন হয়তো ভবিষ্যতে সংঘর্ষের সময় পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেবে; এমন আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার ভারত-চীন পানিসম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সায়নাংশু মোদক।

মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইয়ারলুং জাংবো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ চীনের সার্বভৌম অধিকারের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, এই প্রকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও বন্যা প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

দেশটির এই মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন ইয়ারলুং জাংবো প্রকল্প নিয়ে জলবায়ুগত তথ্য, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্যোগ প্রশমন সহযোগিতার বিষয় নিয়ে ভাটির অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

আরও পড়ুনঃ  বিসিএস পরীক্ষা উপলক্ষ্যে আরএমপির গণবিজ্ঞপ্তি

• পানিশূন্য হবে ভারত?
সায়নাংশু মোদক বলেছেন, তিব্বতে চীনের এই বাঁধ ভাটির অঞ্চলের জলপ্রবাহে প্রভাব ফেলবে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদে যে বিপুল পরিমাণ পানি আসে, তা চীনের অংশ থেকে নয়, বরং হিমালয়ের দক্ষিণের মৌসুমী বৃষ্টিপাত থেকে আসে।

তিনি বলেন, চীনের পরিকল্পনাটি একটি ‌‘রান অব দ্য রিভার’ প্রকল্প। অর্থাৎ ব্রহ্মপুত্র নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রেখেই এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

ভারত নিজেও এই নদীর ওপর দুটি বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। চীনের ইয়ারলুং জাংবো নদী ভারতে ‘সিয়াং’ নামে পরিচিত। ভারতের প্রস্তাবিত দুটি বাঁধের একটি অরুণাচল প্রদেশে করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পটি ১১ দশমিক ৫ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ার কথা। অরুণাচলের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে।

মোদক বলেন, এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য আংশিকভাবে ভারতের দাবিকে শক্তিশালী করা। যাতে ভবিষ্যতে চীন যদি পানিপ্রবাহ ঘোরানোর চেষ্টা করে, তখন ভারত তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলতে পারবে যে তারা এই পানি ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, ‘‘যদি ভারত দেখাতে পারে, তারা এই পানি ব্যবহার করছে, তাহলে চীন একতরফাভাবে নদীর পানিপ্রবাহ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবে না।’’

আরও পড়ুনঃ  দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী আমাদের করণীয় কী?

• বিরোধ নতুন নয়
বাঁধ ও পানি নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধ নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছে, বিতর্কিত কাশ্মির অঞ্চলে যৌথ পানিসম্পদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত। ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার পর এই অভিযোগ করে পাকিস্তান। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির আওতায় উভয় দেশের মাঝে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি হতো।

অতীতে মিসরেও জ্যেষ্ঠ এক রাজনীতিককে ইথিওপিয়ার পরিকল্পিত বিতর্কিত নীলনদের বাঁধ বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে দেখা গিয়েছিল। যা পরে দুই দেশের মাঝে দীর্ঘমেয়াদী বিরোধে রূপ নেয়।

• ভূমিকম্প ও বৈরী আবহাওয়ার ঝুঁকি
তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীর ওপর এই বাঁধটি একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে ভূমিধস, হিমবাহ হ্রদের বন্যা এবং ঝড়ের ঝুঁকি রয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিব্বতে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা সেখানে ব্যাপক বাঁধ নির্মাণের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এছাড়া এই প্রকল্পের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত একটি উপনদীতে ছোট আকারের আরেকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে চীন। সমতল থেকে অনেক উঁচুতে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশটি। উচ্চতা আর প্রবল শীতের কারণে প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ায় প্রতি বছর মাত্র চার মাস সেই প্রকল্পের কাজ চালানো সম্ভব হয়।

সূত্র: রয়টার্স।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।