চাঁপাইনবাবগঞ্জ, প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ন্যায্য পানি বন্টনের দাবিতে বিশাল সমাবেশ করেছে স্থানীয় বিএনপি। বুধবার( ৫ নভেম্বর) বিকালে শিবগঞ্জ সরকারি মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এই আয়োজনে অংশ নেন বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বিপুলসংখ্যক স্থানীয় জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। নিজেদের দুর্ভোগ ও দুর্দশার সমাধান চান তারা। একই মঞ্চে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা, প্রধান বক্তা ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ ও বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম।
‘চলো জি ভাই, হাঁরঘে পদ্মা বাঁচাই; পদ্মা বাঁচাতে ঐক্য গড়ি; আমাদের গঙ্গা-পদ্মা, আমাদের অধিকার- নানা স্লোগান ছিলো সবার মুখে। ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও‘পদ্মা বাঁচানোর’দাবিতে এই কর্মসূচি নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা তার বক্তব্যে বলেন, আজকের সমাবেশের উদ্দেশ্য একটাই, পদ্মা বাঁচাতে হবে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় মারাত্মক পানি সংকট তৈরি হচ্ছে। আবার বর্ষাকালে সেই ফারাক্কারই সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রায় প্রতিবছরই পদ্মা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা ও ভাঙন দেখা দেয়। বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ আর কৃষির প্রধান উপাদান হচ্ছে পানি। দেশ বাঁচাতে হলে কৃষি বাঁচাতে হবে, নদী বাঁচাতে হবে। এজন্য ঐক্য গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
প্রধান বক্তা হারুনুর রশিদ বলেছেন, পদ্মা বাঁচাও আন্দোলনে জাতীয় পর্যায়ে জনমত গড়ে তোলার লক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন। বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা ফারাক্কা ব্যারেজ। পদ্মার উজানে ফারাক্কায় বাঁধ তৈরি করে গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে পানি সংকট তৈরি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে পানিবন্টন চুক্তি থাকলেও আশানুরূপ ফল পাইনি। বিএনপি ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পরে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেটি একনেকে পাশ হয়েছিল কিন্তু ভারতের দালাল শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। ভারত বাংলাদেশের শত্রুদের আশ্রয় দিয়েছে, তারা আমাদের পানিতে মারছে, সীমান্তে মারছে, বাণিজ্যে মারছে। এসব দাবি আদায়ে আমরা একটি বড় আকারে জনমত গঠন করতে চাই।
সমাবেশে যোগ দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম বলেন, পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের যা যা করার তাই করব আমরা।
এর আগে গত ২ নভেম্বর ‘পদ্মা বাঁচাও’ দাবিতে জেলা শহরের শহীদ সাটু হল অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৭ নভেম্বর ভোলাহাটে সমাবেশ করবে বিএনপি। ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বড় কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
পদ্মার উজানে ফারাক্কায় বাঁধ তৈরি করে গঙ্গার পানির একতরফা প্রত্যাহারে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লং মার্চের ডাক দেন। সেদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ তার ডাকে সাড়া দেন। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ওই কর্মসূচি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পিন্ডির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করতে নয়।
ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে দেশের নদীগুলোতে পানি কমে যাওয়া, চর জেগে ওঠাসহ নদ-নদী শুকিয়ে যায়। এই বাঁধের প্রভাবে কৃষি, অর্থনীতি, এবং পরিবেশগতভাবেও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে, যা জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। পানির অভাবে কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাঁধের কারণে সুদূরপ্রসারী এবং মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের কারণে গঙ্গার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়, যা সেখানকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
উজানে ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগের সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মার ৮০ শতাংশ পানির প্রবাহ কমে গেছে। পদ্মার অনেক শাখা নদীও গত ৫০ বছরে শুকিয়ে গেছে।

