নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ সোমবার। ভোর ৫:২৯। ১৭ নভেম্বর, ২০২৫।

শেখ হাসিনার মামলার রায় আজ

নভেম্বর ১৭, ২০২৫ ১:০৩
Link Copied!

* রায় দেখবে বিশ্ব, লাইভ করবে রয়টার্স-বিটিভি
*রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখানো হবে বড় পর্দায়
* ট্রাইব্যুনাল ঘিরে থাকবেন সেনা ও বিজিবি সদস্যরা
* সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা চিফ প্রসিকিউটরের
*নারী হিসেবে অনুকম্পা পাবেন না শেখ হাসিনা প্রসিকিউটর

অনলাইন ডেস্ক : ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে আজ সোমবার। টানা কয়েক মাসের বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ বহুল প্রতীক্ষিত এ রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবকে প্রধানমন্ত্রীর সাজা কী হয়, তা জানার জন্য আজ দেশবাসীর নজর থাকছে ট্রাইব্যুনালে। একই অপরাধে শেখ হাসিনার সঙ্গে এদিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের অপরাধের রায়ও ঘোষণা দেবেন বিশেষ আদালত। এই রায়কে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট এলাকাসহ গোটা রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিন হাসিনাসহ দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ সোমবার সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম গতকাল রোববার জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এ রায় দেওয়া হবে। শেখ হাসিনার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও রয়টার্স, যা দেখবে পুরো বিশ্ব। সেই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজেও এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শুধু তাই নয়, ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় স্ক্রিনে রায় ঘোষণা সম্প্রচার করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে এর আগে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তবে এবারও কি নারী হিসেবে অনুকম্পা পাবেন শেখ হাসিনা সেই প্রশ্ন থাকলেও এমন সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। শেখ হাসিনার রায়ের পর তার সাজা হলে পরোয়ানা ইন্টারপোলে পাঠানো হবে বলেও জানায় প্রসিকিউশন।

গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেসব বর্ণনা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনার এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। গত ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয় ২৩ অক্টোবর।

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগগুলো হলো গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন। গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়, যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদ- চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি যুক্তিতর্কে এ মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস আবেদন করেন। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনেরও খালাস আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সেদিন (২৩ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই মামলার রায় কবে দেওয়া হবে, তা ১৩ নভেম্বর জানানো হবে। সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ (১৭ নভেম্বর) ধার্য করলেন।

রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন চেয়ে সেনা সদরে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস থেকে সেনা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে এই মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবারও সেনা মোতায়েন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। সেই অনুযায়ী সেনাও মোতায়েন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও মামলাটির সংবেদনশীলতার কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।-রূপালী বাংলাদেশ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।