নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ শনিবার। রাত ৯:৪৬। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।

যশোরের ঐতিহ্যবাহি মণিহার সিনেমা হল বন্ধের পথে

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫ ৫:১৩
Link Copied!

মনির হোসেন বেনাপোল : এশিয়ার এক সময় দ্বিতীয় বৃহত্তম সিনেমা হল হিসাবে খ্যাত মণিহার—আজ সেই দিনগুলোকে শুধু স্মৃতিতে ধারণ করতে হলো। এক সময় সিনেমাপ্রেমীদের ভিড় সর্বদা লক্ষ্য করত এই হলের পথে। কিন্তু এখন শুধু ঈদে দুইবার দর্শক আসে; অন্য সময় মুখোশধারী খালি আসনই সাক্ষী দিচ্ছে শিকড়হীন সময়ের।

হল মালিক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন,“এখন টলিউড অভিনেতা জিতের ‘অভিমান’ ছবিটি চলছে। এর আগে তিনবার চালিয়েছি, এখন চারবার। কিন্তু দর্শক সমাগম নেই বললেই চলে। ছবিটি আজ অনলাইন বা মোবাইলে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়—সিনেমা হলে আসার প্রয়োজন কম।”

মণিহারের বন্ধ হওয়ার কারণগুলো শুধু দর্শকসংখ্যার হ্রাসেই সীমাবদ্ধ নয়। ঢালিউডে নতুন ছবি না আসায় হল সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। মিঠু জানান, ঈদ মৌসুম ছাড়া হল এখন নিজের খরচ তুলতে পারছে না। কমপ্লেক্সের দোকান ও হোটেল থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  ৩ প্রতিষ্ঠানের যৌথ আয়োজনে আইসিবিটি সম্মেলনের উদ্বোধন

“একসময় ১৩ শতাধিক সিনেমা হল ছিল। এখন কমতে কমতে ৭০–৭৫টি হলে ঠেকেছে। অতিসম্প্রতি আরও কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। মণিহারও শিগগিরই বন্ধ হওয়ার পথে। যদি শুধু সিনেমা হল হতো, এতদিনে বন্ধ হয়ে যেত। আমাদের আশেপাশে কিছু দোকান আছে বলেই টিকে ছিলাম।”

নতুন ছবি না থাকা আর আর্ট ফিল্মের সঙ্কট আরও চাপ বাড়িয়েছে। মিঠু বলেন, “যত ভালো ছবি পাব, হল তত ভালো চলবে। ঈদের পর তিনটি ছবি পেলাম। এরপর থেকে আর কোনো ছবি নেই। এ অবস্থায় হলে ছবি চালানো সম্ভব নয়।”

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ ভ্রমণে কানাডার ‘উচ্চ সতর্কতা’

মনিহার সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা দর্শক মো.সালাউদ্দিন বলেন, নতুন নতুন ছবি তৈরি না হলে আমরা হলে আসবো না। কারণ দর্শক সব সময় নতুন ছবি দেখে। পুরাতন ছবির কোন চাহিদা নাই আমাদের।
এদেশের নতুন ছবি তৈরীর জন্য একান্ত প্রয়োজন,দর্শকদের জন্য।

ঢালিউডের দৈন্যকাল, নতুন বিদেশি ছবি আমদানি বন্ধ, এবং দেশের প্রোডাকশন না হওয়া—এই তিনটি মিলিত কারণে মণিহারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। মিঠু বলেন, “সিনেমা হল বাঁচাতে হলে বেশি ভালো ছবি বানাতে হবে। আগে সপ্তাহে দুটি ছবি পেতাম, এখন মাসে দু’টি পাওয়াও কষ্টকর। বিদেশি ছবি আমদানি বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ।”

আরও পড়ুনঃ  ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ম্যারাথনে তৌসিফ মাহবুব

১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর যশোরের সিনেমা ইতিহাসে জনি সিনেমা দিয়ে প্রথমবার পথচলা শুরু করা হয়। মণিহার হলের মোট আসন সংখ্যা ১,৪০০। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান এর তত্ত্বাবধানে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে নির্মাণ ও সাজসজ্জা সম্পন্ন হয়েছিল। আজ সেই প্রাচীন বিশাল হলের শূন্য আসনগুলো যেন অতীতের গৌরব ও মধুর স্মৃতিকে চুপচাপ সংরক্ষণ করছে।

মণিহার শুধু একটি হল নয়—এটি যশোরের সিনেমা সংস্কৃতির স্মৃতি, যেখানে প্রতিটি আসন, প্রতিটি স্ক্রিনে বেজে উঠত মানুষ ও গল্পের মিলন। আর এখন সেই ইতিহাসের প্রতি চুপচাপ শ্রদ্ধা জানিয়ে, বন্ধ হওয়ার দিনটির দিকে এগোচ্ছে মণিহার।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।