মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী পুটখালী, গোগা, উলাশী, বাগআঁচড়া ও কায়বাসহ ৫ টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষজন বলছেন তা যথেষ্ট নয়। বেশির ভাগ পানিবন্দী মানুষ ত্রাণ পাননি।
একটানা হালকা ও ভারী বর্ষণের কারণে এলাকা পানিবন্দী হয়। এর সাথে ভারতীয় ইছামতী নদীর ঢলের পানিতে এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। দাউদখালী খালদিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে ইছামতী নদীর পানি। এ কারণে সীমান্তবর্তী ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন অনেক পরিবার। বন্যায় আউশ ধান ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপদ্রুত ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান জানান, আগে থেকেই পানিবন্দী এলাকার স্কুলগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা ছিলো।
রোববার২৪আগস্ট রাত পর্যন্ত উলাশী,বাগআঁচড়া ও কায়বা ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় উজানের পানিতে উপজেলার,রুদ্রপুর,কায়বা, ভবানিপুর, গোগা, আমলাই, সেতাই, বসতপুর, কন্যাদাহ, পুটখালী, খলসি, বারোপোতা, রাজাপুর, মহিষাকুড়া গ্রামের মাঠঘাট ছাপিয়ে রাস্তায় পানি উঠেছে। প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সোম/মঙ্গলবার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায়ই বাড়িতে পানি উঠেছে।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জু জানান , আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সবমিলিয়ে ৫শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ টি পরিবার উঠেছেন। এসব পরিবারকে আমরা খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।
উলাশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুর রাশেদ বলেন , ওই ইউনিয়নের কন্যাদাহ,রামেডাঙ্গা ও নারানতলা পড়ার প্রায় ২৫০ টি পরিবার গত দেড় মাস যাবত পানিবন্দী। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এরইমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সোমবার সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
গোগা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান ,তার ইউনিয়নে প্রায় ১৩শ পরিবার পানিবন্দী। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ -খবর রাখাসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীপক কুমার সাহা সাংবাদিকদের জানান, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় উজানের পানিতে ৪০০ হেক্টর আউশ ধান এবং গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি নিমজ্জিত হয়েছে। ৬০০ হেক্টর জমি পানির নিচে থাকায় এবারের রোপা আমন চাষ হবে না।পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।