নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশ বুধবার। রাত ১১:০৯। ১২ নভেম্বর, ২০২৫।

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় দেড় হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

নভেম্বর ১২, ২০২৫ ৮:২৩
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক : ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির পর গত এক মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ১ হাজার ৫শতাধিক ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ সংক্রান্ত একাধিক স্যাটেলাইট ইমেজ যাচাইয়ের পর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অনেক আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকের মতে, হামলা চালিয়ে ভবন ধ্বংসের মাধ্যমে শান্তি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল। তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আইডিএফ দাবি করেছে, চুক্তির আওতার মধ্যে থেকেই ভবনগুলো ধ্বংস করেছে তারা এবং নিকট ভবিষ্যতে আরও ভবন ও অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।

গত ৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট থেকে তোলা কিছু ছবি বিবিসির হাতে আসে। সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গাজার অনেক এলাকায় এমনকি ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির সময়ও যতগুলো ভবন মোটামুটি অক্ষত অবস্থায় ছিল, সেগুলোর অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন যে প্রস্তাবনা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েল এবং হামাস তাতে সম্মতি জানানোর পর ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় উপত্যকায়। এই যুদ্ধবিরতির আগে টানা দু’বছর যুদ্ধ হয়েছে হামাস এবং আইডিএফের মধ্যে। সেই যুদ্ধে গাজার ৭৫ শতাংশ ভবনের কোনোটি আংশিক, কোনোটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ২০টি পয়েন্ট আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি পয়েন্টে বলা হয়েছে, “যুদ্ধবিরতির পর গাজায় বোমাবর্ষণ ও গোলাগুলিসহ সব রকমের সামরিক অপারেশন স্থগিত থাকবে।”

তবে বিবিসির হাতে থাকা স্যাটেলাইট ইমেজগুলো বলছে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পুরো দমে হামলা চালিয়ে ভবন ও অকাঠামো ধ্বংস করা অব্যাহত রেখেছে আইডিএফ।

যুদ্ধবিরতির সময় একটি হলুদ সীমরেখা টেনে গাজায় উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব অংশ বরাবর সীমারেখা টেনেছিল ইসরায়েল। এই সীমারেখার নাম ইয়েলো লাইন। যেসব ভবন ধ্বংস হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ইয়েলো লাইনের অপর পাশে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে।

খান ইউনিসের আবাসান আল কাবিরা এলাকার বাসিন্দা লানা খলিল বলেন, তিনি যে বাড়িতে থাকতেন— সেটি গত ২ বছর যুদ্ধের সময়ও অক্ষত ছিল। কিন্তু বিরতির পর গত এক মাসে তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আবাসান আল কাবিরার নিকটবর্তী আল মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুতে থাকছেন তিনি।

“ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কিছু বাকি রাখেনি আমাদের জন্য। সব ধ্বংস করে দিয়ে গেছে”, বিবিসিকে বলেছেন লানা খলিল।

একই অবস্থা গাজার আরেক দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার আল বায়েউক এলাকাতেও। সেখানেও যুদ্ধবিরতির পর বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আইডিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করছি না। চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে গাজায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ভবন, সুড়ঙ্গ ও অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে। আমরা সেই কাজটিই করছি।”

এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছিলেন, “সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কি সুরঙ্গ ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংসের মাধ্যমে গাজাকে অসামরিকীকরণ করা ইসরায়েলের নিরাপত্তানীতির অংশ।”

তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা রুসি’র সহযোগী গবেষক ড. এইজ এ হেলইয়ার বিবিসিকে বলেছেন, “ইসরায়েল নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্‌ঘন করছে। কারণ প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে গাজায় একটি নতুন বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ভবন-অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করা হবে। গাজায় এখনও কোনো নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”

ইউরোপভিত্তিক থিংকট্যাংক সংস্থা হিউ লোভ্যাট বিবিসিকে, “একটি নতুন বেসামরিক সরকার গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় যতবেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, যুদ্ধবিরতিও সেই হারে ঝুঁকিতে পড়বে।”

সূত্র : বিবিসি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কথা ২৪ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন somoyerkotha24news@gmail.com ঠিকানায়।